ছাত্র ইউনিয়ন
গতকাল ছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। যারা এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল বা আছে এটা তাদের জন্য এক বিশেষ দিন। ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি ছাত্র রাজনীতির গন্ডী পেড়িয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তনীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে কাজ করেছে করছে। বর্তমানে অবস্থার অবনতি হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন আগের মত সেই আদর্শবাদী সংগঠন নেই। এটা বাংলাদেশের সার্বিক অপরাজনীতি ফসল নাকি অন্যকিছু? অনেকের ধারণা সিপিবির আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, নেতাদের ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ, ক্ষমতার মোহ এসবই ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, উদীচি, খেলাঘর এসব গণসংগঠনে ভাঙন ডেকে আনে। সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষেতমজুর সমিতি, কৃষক সমিতি, ট্রেড ইউনিয়নে সরাসরি যুক্ত থাকতে পারে বলে সেখানে ভাঙন হয়তো নেই, কিন্তু যেখানেই তারা প্রকাশ্যে কাজ করতে পারে না সেখানে অন্যদের মাধ্যমে ক্ষমতার লড়াই চালাতে গিয়ে সংগঠনের অস্তিত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন করে। যদিও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে পরিবারতন্ত্রের জন্য অভিযুক্ত করা হয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বর্তমান সংস্করণ আইনত পারিবারিকতন্ত্রের বলয়ে না থাকলেও কার্যত তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বা আসতে দেয়া হয়নি। কমিউনিস্ট বা বাম আন্দোলন নিয়ে আমার তেমন মোহ নেই, তবে মনে করি রাজনৈতিক পরিবেশ সুস্থ রাখতে ও পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে এরা এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কোন কোন ওষুধ রোগ নিরাময় করতে না পারলেও ব্যথা উপশম করতে পারে। তাই জনজীবনে এসব ওষুধের গুরুত্ব একেবারে কম নয়। বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটা কমিউনিস্ট পার্টির ঐতিহাসিক দায়িত্ব। সেদিক দিয়ে এখনও সিপিবি বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য প্রয়োজন বিভিন্ন গণসংগঠনের সুষ্ঠু ও সুস্থ বিকাশ। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ভূমিকা এক্ষেত্রে অনন্য। কেননা তারা সিপিবির ভবিষ্যত নেতা ও কর্মী সরবরাহকারী। পার্টির রণ-নীতি ও রণকৌশল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্ধারিত হয়। এখানে দ্বিমতের তেমন সুযোগ নেই। কিন্তু ওয়ার্ক ফ্লো ও প্রায়োরিটি নির্ভর করে যারা দায়িত্বে আছে তাদের উপর। এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণের সুযোগ আছে। গণমাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সিপিবি নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য থেকে সেই দ্বন্দ্ব পরিস্কার যা চুড়ান্ত রূপ নেয় বিভিন্ন গণসংগঠনে একাধিক কমিটির আত্মপ্রকাশে। এটা যে স্লো পয়জনিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যা সেটা কি নেতারা বুঝতে পারে? ছাত্র ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের সংস্কার সিপিবির সংস্কারের মধ্য দিয়েই শুরু করতে হবে। অনেকের লেখায় আমার ভাবনার প্রতিধ্বনি দেখেছি। আশা করি কমরেডরা তাদের এই উৎকন্ঠা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে।
মস্কো, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
Comments
Post a Comment