আবারো শুভ নববর্ষ

ছোটবেলায় গাছগুলো যখন ছিল অনেক বড় আর আকাশ ছিল অনেক অনেক দূরে, অনেক যোজন উপরে নববর্ষ ছিল একদমই অন্যরকম। হয়তোবা তখন থেকেই এ নিয়েও রাজনীতি ছিল, ছিল নববর্ষ বা বাংলা পঞ্জিকাকে ব্যবহার করে জাতিভেদের চেষ্টা, তবে গ্রাম বাংলায় চিত্র ছিল ভিন্ন। এর নাম ছিল হালখাতা। মূলতঃ ব্যবসায়ী পরিবারগুলো ঘটা করে পালন করত। অন্যেরা ঘরোয়া ভাবে। ঢাকা ও অন্যান্য জায়গায় এটা সেই সাথে ছিল সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন। তবে যেহেতু তখন পঞ্জিকার রাজনীতি শুরু হয়নি তাই তখন চৈত্র সংক্রান্তি আর পয়লা বৈশাখের আসন দখলের প্রতিযোগিতা ছিল না। এমনকি আশির দশকের শুরুতে, যখন দেশ ছেড়ে বিদেশে আসি তখনও এসবের আগমন ঘটেনি। ইদানিং যখন নববর্ষের ঢেউ এসেছে ফেসবুকে আর মানুষের সাথে যোগাযোগ হয়েছে প্রযুক্তিগত দিক থেকে সহজ এসব ঘটনা সামনে চলে এসেছে। 

বাংলা পঞ্জিকার ব্যবহার এখন মূলতঃ বাঙালি হিন্দুদের ধর্মীয় ও বিয়ে ইত্যাদি সামাজিক কাজে সীমাবদ্ধ যা হয়ে থাকে কোলকাতা থেকে প্রকাশিত পঞ্জিকা অনুসারে। সমগ্র বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য বাংলা পঞ্জিকা মূলতঃ পয়লা বৈশাখ আর পঁচিশে বৈশাখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই ১৪ এপ্রিলে পয়লা বৈশাখকে পেরেক ঠুকে গেঁথে দেয়ায় শুরু হয়েছে দ্বৈত শাসন। এটা বাংলাদেশে। এখানকার হিন্দুরা বাড়িতে পালন করছে চৈত্র সংক্রান্তি আর বাইরে পয়লা বৈশাখ। আর বাংলাদেশ বৃহত্তর বাঙালি সংস্কৃতি থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলছে। আর এভাবেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দ্বিজাতিতত্ত্বকে অস্বীকার করা বাংলাদেশে সবার অগোচরে সেই দ্বিজাতিতত্ত্বের লালন পালন করা হচ্ছে। আর এর ফলে সবচেয়ে লাভবান যে চক্র, মানে উগ্র সাম্প্রদায়িক চক্র, তারা এটাকে হিন্দুয়ানী বলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে চাইছে। 
অনেকে একটি মাত্র উপলক্ষ্যে দুই দিন উৎসব করার সুযোগ পেলে ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিত। পরিচিত অনেকে আজ মস্কোয় ঈদ করে দেশে যায় আগামীকাল সেখানে ঈদ করার জন্য। তবে আমরা ঐক্য নয়, বিভেদেই আপাতত বিশ্বাসী। বাঙালি সংস্কৃতিকে ধর্মীয় পোশাক পরিয়ে আলাদা আলাদা পথে চলতে আগ্রহী। যাহোক ১৪ এপ্রিল যারা চৈত্র সংক্রান্তি পালন করেছে আজ তাদের জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা। আজ আর মঙ্গল কামনায় বাধা নেই। মঙ্গলময় হোক নতুন বছর। শুভ নববর্ষ।

মস্কো, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

প্রশ্ন

সিপিবি কংগ্রেস

রিংকু