বিদায়
ঘুম ভাঙতেই দেখি ফেসবুক ভরে গেছে খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদে। দীর্ঘ দিন যাবৎ গৃহবন্দী ও অসুস্থ বিধায় রাজনীতিতে ততটা সক্রিয় ছিলেন না যদিও তাঁর নাম দিয়ে শত্রু মিত্র দুই পক্ষই রাজনীতিতে ফায়দা লাভের চেষ্টা করেছে। তিনি নিজে রাজনীতিতে আসার জন্য নিজেকে কখনো প্রস্তুত করেন নি, রাজনীতিই তাঁকে টেনে এনেছে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। অনেক ভুলভ্রান্তি থাকার পরেও তিনি যথেষ্ট যোগ্যতার সাথেই সেই দায়িত্ব পালন করেছেন সেটা বর্তমান শাসকদের দিকে তাকালে পরিষ্কার হয়ে যায়। ভালো লাগুক আর নাই লাগুক আমাদের একটাই ইতিহাস। আর সেখানে বিশেষ করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের রাজনীতির একটা বড় দুর্বলতা পরাজয় মেনে নিতে না পারা ও বিভিন্ন দলের ও নেতাদের আপোষহীন মনোভাব। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য আপোষ করে চলা ও পরাজয়কে স্বীকার করা। এই দুটির অনুপস্থিতিই স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্র জন্ম দেয়। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া ব্যতিক্রম ছিলেন না। এরশাদের পতনের পর বাংলাদেশের সামনে গণতান্ত্রিক পথে এগুনোর যে দ্বার খুলে যায় সেটা সঠিক ভাবে ব্যবহার না করতে কারণ বড় দুই দল ও দুই নেত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার অভাব। কথায় আছে স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। শুধু স্বাধীনতা নয়, যেকোনো কিছুই। অর্জন হয় আক্রমণাত্মক বা সৃজনশীল পদ্ধতিতে, রক্ষা সবসময়ই রক্ষণশীল। যার ফলে বিরোধী ও সরকারি দলের রাজনীতি গুনগত ভাবে ভিন্ন। আমাদের বিরোধী দলগুলো খুব কমই সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, মূলত ছিল আক্রমণাত্মক। একই ভাবে সরকারি দলের রক্ষণাত্মক কর্মকান্ড প্রায়ই প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।
অনেক কিছু করার জন্য যেমন, অনেক সম্ভাবনা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার জন্যেও তেমনি খালেদা জিয়া স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রশ্ন একটাই খালেদা জিয়ার প্রস্থানের সাথে সাথে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে এন্টাগোনাস্টিক বা বিররোধিতামূক ধারা বিদায় নিয়ে সহযোগিতার পথ খুলবে কি না?
দুবনা, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
Comments
Post a Comment