সময়

সকাল থেকেই ফেসবুক ছেয়ে গেছে বিজয়ার শুভেচ্ছায়। বার্তা আসছে ইনবক্সে। শুভেচ্ছা, শুভকামনার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে ফেসবুক সাগর। সাধ্যমত লাইক বা উত্তর দিচ্ছি। কিন্তু একটা বিষয় আমাকে একটু দ্বিধায় ফেলছে।

সময়ের হিসেবে সবচেয়ে দূরে হচ্ছে মানুষের ছোটবেলা। এই ষাট ছুঁই ছুঁই বয়সে সময়টা একেবারেই কম নয়। কিন্তু ছোটবেলার ঘটনাগুলোই আমার সবচেয়ে স্পষ্ট মনে আছে। কেন? মনে হয় তখন ঘটনা কম ঘটে, ঘটে স্লো মোশনে। তাছাড়া তখন মন অনেকটা সাদা কাগজের মত। সামান্য আঁচড়ও দাগ কেটে যায়। একটু বড় হলে ঘটনার ভিড়ে অনেক কিছুই হারিয়ে যায় বা গুলিয়ে যায়।

সেই সময় আমাদের বাড়িতেও দুর্গা পূজা হত। সেসবের বিস্তারিত বিবরণ বিভিন্ন সময়ে দিয়েছি। আজ অন্য কথা। সেই সময় নদী ছিল জলবতী, এমনকি আমাদের বড় খালে ভরা বর্ষা। রামার ভিটা থেকে প্রতিমা নৌকায় তুলে নদীতে যেতাম বিসর্জন দিতে। আমাদের বাড়িতে বিসর্জনের জন্য একটা বড় নৌকা পর্যন্ত ছিল। মাইকে বাজত

ঝিম না না ঝিম নানা ঝিম নানা ঝিম নানারে
গাঙ্গে ঢেউ খেলে যায় কন্যা মাছ ধরিতে আয়
জাল ফেলিতে যাইয়া কন্যা ডুবিস না

বিসর্জনের পরে গোমড়া মুখে সবার বাড়ি ফেরা, যেন পরম আত্নীয় কাউকে বাসে তুলে বিদায় দিয়ে এলাম। জানতাম বছর ঘুরলেই ফিরে আসবে, তবুও মন খারাপের কমতি ছিল না। পরের দিন ভোর থেকে সবাই বেরিয়ে পড়ত বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে। প্রণাম, কোলাকুলি, আশীর্বাদ, মিষ্টি মুখ। ঈদে বা নববর্ষে যেমন ঠিক তেমনটাই। মানে দশমীর দিন নয়, বিসর্জনের পরের দিন এই শুভেচ্ছা আর শুভকামনার ফোয়ারা উপচে পড়ত।

আসলে সময়ের সাথে সব কিছুই পাল্টে যায়, পাল্টে যায় ফ্যাশন, সাথে পূজার বা উৎসবের আনন্দ। এখন পূজা মানেই বিশাল ব্যাপার। কোটি কোটি টাকার ছড়াছড়ি। দেবী এখন আগের মত আটপৌরে মায়ের রূপে আসেন না, তিনি এখন আধুনিকা, বলিউডের বাঘা বাঘা নায়িকাদের পেছনে ফেলে দিতে পারেন রূপে লাবন্যে, সাজসজ্জায়। হয়তো অনেকেই তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁকে বিদেয় করে কন্যাদায় থেকে মুক্ত হতে চান!

সবাইকে শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন।
দুবনা, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি