প্রতীক

আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতীকের ছড়াছড়ি। সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ প্রতীক ব্যবহার করে আসছে তার জানা আর অজানা দু'টোকেই প্রকাশ করার জন্য। এই যে আমি লিখছি সেটাও সেই প্রতীক ব্যবহার করেই। প্রতিটি অক্ষর যা একেকটি প্রতীক তা আমাকে সাহায্য করেছে আমার ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে। এই ভাবনা বা কল্পনা যখন আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটায় সেটা হয় জীবনের গল্প। অপুর সংসার লেখকের কল্পনাপ্রসূত হলেও তাতে পাঠক নিজের পরিচিত বাস্তবতাই দেখতে পায়। তাই এখানে কল্পনা আর বাস্তব একাকার হয়ে যায়। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে মানুষ তার কল্পনার ডানায় ভর করে ভবিষ্যতে পাড়ি জমায় যার অনেক কিছুই একদিন বাস্তবায়িত হবে বলে সে বিশ্বাস করে। আরও কিছু কল্পনা সে বিশ্বাস করে তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে তবে সেই কল্পনার কুশীলবরা তার ভাগ্যই শুধু বদলাতে পারে না, তার পরলৌকিক ভালোমন্দ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই ঈশ্বর ও দেবতাদের ঘিরে তৈরি হয় ধর্ম যা তার কল্পনাকে অন্ধবিশ্বাসে পরিণত করে। তবে সব কিছুর মূলে রয়েছে প্রতীক। আর প্রতীককে বোঝার ও গ্রহণ করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে কেউ হয় ভক্তিবাদী আর কেউ যুক্তিবাদী।

মহিষাসুরের বিরুদ্ধে দুর্গার যে জয় সেটা আসলে যা কিছু মানুষের জন্য কল্যাণকর সেই শক্তির জয় অকল্যাণকর পাশবিক শক্তির বিরুদ্ধে। শান্তি, শক্তি ইত্যাদি অনেক কিছুর পাশাপাশি দুর্গা এখানে বিদ্যা ও বুদ্ধি রূপেও আবির্ভূত হন যা আমাদের যুক্তিবাদী হতে বলে। সর্বোপরি তিনি আসেন মাতৃরূপে। আর মা মানেই মমতাময়ী, স্নেহশীলা, মঙ্গলময়ী। বিজয়া তাই সব রকম অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয়, অশান্তি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির জয়। তবে সেই শান্তি আসে লড়াইয়ের মাধ্যমে। শান্তির জন্য যুদ্ধ করতে হয়। আসুন আমরাও নিজেদের ভেতরের অশুভ, পাশবিক শক্তিকে দমন করে কিছুটা হলেও মানবিক হয়ে উঠি। নিজের ভেতরে শান্তি আনতে না পারলে বাইরে শান্তি অধরাই থেকে যাবে। 

বিজয়ার শুভেচ্ছা

দুবনা, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা