স্বার্থ

একুশের বইমেলা কেমন হওয়া উচিৎ বা উচিৎ নয় এ নিয়ে ফেসবুকে অনেকেই লিখেছেন। অনেকেই বাংলাদেশের লেখকদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ বলছেন ভালো লেখকদের সাথে প্রতিযোগিতা নেই বলে লেখার মান উন্নত হচ্ছে না। অন্যদিকে কেউ বলছেন একুশের বইমেলা সবার জন্য, বিশেষ করে কোলকাতার (পড়ুন পশ্চিম বঙ্গের) লেখকদের জন্য খুলে দিলে দেশের প্রকাশনা শিল্প আর্থিক সমস্যায় পড়বে। অর্থাৎ আপনি যদি সাহিত্যের মাধ্যমে ভাষার মান উন্নত করতে চান তাহলে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে চাইলে লেখকের মান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

একুশের বইমেলায় কোলকাতার বই নেই বলে একজন প্রশ্ন করেছেন "বাংলাদেশের বাঙালি কি পাহাড়ীদের মত সংরক্ষিত জাতি?" এর উত্তর খুঁজতে হবে ভারত বিভাগে। মুসলমানদের আলাদা বাসভূমি হিসেবে পাকিস্তানের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে সংরক্ষিত জাতির মানসিকতা তৈরি করা হয়েছিল। সে সময় রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূর্ণ করার জন্য এই স্লোগান সামনে আনা হলেও পরবর্তীতে নতুন রাষ্ট্রের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বেশিরভাগ সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে একাত্তরের পরে এমনকি বাহাত্তরের সংবিধান সামনে রেখেও আমরা পাকিস্তানী আমলের অনেক কিছু থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। 

আমার মনে হয় অর্থনীতি নয়, বর্তমানে বাংলা ভাষার দুর্দশার পেছনে রয়েছে আমাদের হীনমন্যতা। এবং সেটা দুই বাংলায়ই। বাংলাদেশে আমরা হিন্দুদের ভাষা বলে বাংলাকে সন্দেহের চোখে দেখি আর অর্থনৈতিক ভাবে বাঞ্ছনীয় নয় বলে পশ্চিম বঙ্গের মানুষ বাংলাকে অবহেলা করে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ ইংরেজি না জানলে লজ্জিত বোধ করে অথচ প্রশ্ন করে না ইংরেজি ভাষাভাষী অধিকাংশ মানুষ বাংলায় মুর্খ। ইউরোপে এমনটা তেমন দেখা যায় না। 

মহাবিশ্বের সব কিছুই পরস্পর নির্ভরশীল। তাই চাইলেই আমরা অন্যের প্রভাব বলয়ের বাইরে যেতে পারব না। তবে সেই প্রভাব পরস্পরের জন্য লাভজনক করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করতে পারি। কারণ যখনই অন্যের হিস্যার প্রতি অসম্মান দেখানো হয় তখনই জন্ম নেয় অবিশ্বাস। অবিশ্বাস থেকে বিপর্যয়। তাই বাইরের সমস্যা সমাধানের আগে ভেতরের সমস্যা বোঝা ও দূর করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

দুবনা, ০৭ মার্চ ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা