স্বপ্ন

মাঝে মধ্যে বেশ অবাক করা কিছু কাণ্ড ঘটে। এক সময় আমাদের ডিপার্টমেন্টে নিয়মিত সেমিনার হত সোমবার ও শুক্রবার। পরে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মাস হল সেটা আবার চালু হয়েছে। আমি সোমবার করে ক্লাস নিতে মস্কো যাই, গত সেপ্টেম্বর থেকে সেদিন অন্য কোন শিক্ষকের ক্লাস থাকে না, তাই দেখা হয় না। অথচ আমার পড়াতে যাবার অনেক কারণের একটা নিজের শিক্ষকদের সাথে দেখা করা, বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করা। তাই এক সময় প্রস্তাব দিই সেমিনারের আয়োজন করার। আমার শিক্ষকদের সবার বয়স ৮৫ বছরের আশেপাশে, আবার অন্য দিন আমার পক্ষে দুবনা থেকে আসা সম্ভব নয়। তাই একটু ইতস্তত বোধ করছিলাম। তবে সবাই সানন্দে রাজী হয়ে গেলেন। আসলে মনে হয় সবাই এ ধরণের মত বিনিময়ের সুযোগ খুঁজছিলেন। আমাদের ডিপার্টমেন্টের বরাবরই সুনাম ছিল লিবারেল বলে, যেখানে নির্দ্বিধায় নিজের কাজের উপর বলা যায়। ভুল হলে সেটা যুক্তি দিয়ে খন্ডন করা হয়। আমিই মূলত বিভিন্ন লোকদের ডাকি সেখানে প্রবন্ধ পড়ার জন্য।

আগামী সোমবার প্রবন্ধ পড়বেন দুবনার আমার এক কলিগ। গতকাল যখন সাঁতার কেটে ক্লাবে গেছি সেমিনারের প্রচারের দায়িত্বে থাকা মাক্সিমের ফোন

পেস্তভের সেমিনার অনলাইনে না অফলাইনে হবে?
যতদূর জানি অফলাইনে।
আপনি একটু জেনে জানাবেন, আমি ওভাবে সার্কুলার দেব।
ঠিক আছে।

আমি তখনই ভেবেছিলাম বাসায় ফিরে পেস্তভের সাথে যোগাযোগ করব। একটু সকাল সকাল আজ ল্যাব থেকে বাসায় ফিরছিলাম। দেখি আমার ল্যাবের সামনে জ্যাগাটায় কিসব কাজকর্ম চলছে। অনেক লোকজন হাতে গাছ নিয়ে লাগাতে যাচ্ছে। ওখানেই পেস্তভের সাথে দেখা।

আমি আপনাকে ফোন করেছিলাম গত রাতে। পাইনি। মাক্সিম জানতে চেয়েছিল আপনি কি মস্কো যাবেন নাকি অনলাইনে প্রবন্ধ পড়বেন?
আমি মস্কো যাব বলেই তো ঠিক করেছি।
ঠিক আছে তাহলে আমি মাক্সিমকে জানিয়ে দিচ্ছি।

আমি খবরটা মাক্সিমকে জানিয়ে নিশিন্ত হলাম। কিছুক্ষণ পরে কুকুরদের গুড মর্নিঙের ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গলে প্রথমেই মনে হল মাক্সিমের কথা। পেস্তভের সাথে কথা হয়েছে। ও যেন অফলাইনে সেমিনারের ঘোষণা দেয়। এরপর মনে হল, আচ্ছা আমি কি পেস্তভের সাথে সত্যিই কথা বলেছি? তাকে কি গত কাল ফোন করেছিলাম? কল লগ সার্চ করে দেখি গতরাতের শেষ কল ছিল মাক্সিমের কাছ থেকে। মানে গত কাল পেস্তভকে ফোন করা, আজ তার সাথে দেখা হওয়া এসবই কল্পনা!

ফোন করলাম পেস্তভকে। জিজ্ঞেস করলাম সে কীভাবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে চায়। সব জেনে মাক্সিমকে জানালাম। কিন্তু মনে একটা প্রশ্ন রয়েই গেল - আমি গত কাল পেস্তভকে ফোন করিনি স্রেফ ভুলে গেছিলাম বলে। মাক্সিমের ফোন পেয়ে পেস্তভকে ফোন করার কথা ভাবলেও পরে আর সেটা মনে ছিল না। তাহলে কেন এই স্বপ্ন, এই কথোপকথন, সবচেয়ে বড় কথা ঠিক যেভাবে করার দরকার ছিল সব ঠিক সেভাবেই করা? জীবন রহস্যময়।

দুবনা, ২২ মার্চ ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা