পোশাক
কয়েক দিন আগে এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল। ও দেশে ওর শিক্ষকতার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা বলল। জানাল কী কী ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় শিক্ষকদের। জিজ্ঞেস করল ইদানিং হিজাব নিয়ে না ঘটছে সেটা জানি কিনা। বললাম, আমার টাইম লাইনে খুব কম মানুষের প্রবেশাধিকার আছে। তাই খুব কম খবরই পাই। ওর মুখেই শুনলাম ইন্টার্ভিউ বোর্ডে হিজাব খুলে নিজেকে শনাক্ত করতে বলায় এক শিক্ষক নাকি চাকুরীচ্যুত হয়েছে। এটা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। কারণ ইন্টার্ভিউ হল মুখামুখি প্রশ্নোত্তর। তাই কে প্রশ্ন করছে, কাকে করছে সেটা জানা জরুরি। এভাবে কি ব্যাংক লোন দেবে? অথবা বিদেশে যেতে হলে এভাবে কি ইমিগ্রেশন পার হওয়া যাবে? ধর্মীয় কারণে কেউ হিজাব পরতেই পারে। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে আইডেন্টিফাই করা আইনের আওতায় পড়ে সেক্ষেত্রে? আসলে ধর্মের সাথে সামাজিক ও পেনাল কোডের অনেক ক্ষেত্রেই অসাঞ্জস্য দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কোন আইন প্রাধান্য পাবে সেটা সরকারকেই ঠিক করতে হবে। রুশরা বলে অন্যের মন্দিরে নিজের রীতিনীতি নিয়ে যেতে নেই। তাই ধর্মের ব্যাপারে যেমন ধর্মীয় আইন সবার ঊর্ধ্বে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে সামাজিক বা রাষ্ট্রের আইন প্রাধান্য পাবে। যাহোক এ নিয়ে আমাদের বেশ কিছুক্ষণ কথা হল। এরপর এল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথায়। বলল ওর ক্লাসে মেয়েরা প্রায় সবাই হিজাব পরে আসে, তাই কোন দিন কারো মুখে দেখেনি। এজন্য মৌখিক পরীক্ষা নিতে অসুবিধা হত। একদিন মার্কেটে এক মেয়ে এসে সম্ভাষণ জানাল। যদিও মনে হয়েছিল ও তার ছাত্রী তবে শিওর হয়ে বলতে পারবে না, কারণ জীবনে কখনোই ওদের মুখ দেখেনি। আমি ওকে বললাম আমার গল্প। আমাকে রাস্তাঘাটে অনেকেই সম্ভাষণ জানায়। ছেলেমেয়ে সবাই। পরে আমি ভাবতে শুরু করি এরা কারা। আমার ধারণা এরা সেই সব মানুষ যাদের সাথে আমি সাঁতার কাটি, স্টীম বাথ নিই। ওদের দেখি স্বল্প পোশাকে। পরে রাস্তা ঘাঁটে যখন কেতাদুরস্থ পোশাক পরে আমাকে শুভেচ্ছা জানায়, আমি পড়ি বিপদে। কারণ সেই সময় তার সম্ভাষণের উত্তর দিলেও মনে প্রশ্ন থেকেই যায় লোকটা কে? আমাকে ওরা চেনে গায়ের রঙে, কিন্তু আমার চোখে সুইমিং পুলে ওরা সবাই প্রায় এক, ঠিক যেমন হত সবাই হিজাব পরলে।
দুবনা, ১৫ মার্চ ২০২৪
দুবনা, ১৫ মার্চ ২০২৪
Comments
Post a Comment