দিল্লীর আগুন
বস্তুর
জড় বল তার উপর
বাহ্যিক বল প্রয়োগ না
করলে কোন ফ্রেম অফ
রেফারেন্সের সাপেক্ষে তাকে স্থির রাখবে
অথবা সমবেগে সরল পথে চলতে
বাধ্য করবে আর বাহ্যিক
বলের উপস্থিতিতে গতির পরিবর্তন করার
প্রচেষ্টা রোধ করবে। যেকোনো
বস্তুর এই জড় বৈশিষ্ট
নির্ধারিত হয় মহাবিশ্বের বাকী
সমস্ত বস্তু দ্বারা আর সেটা নির্ভর
করে মহাবিশ্বে এই সমস্ত বস্তুর
অবস্থানের উপর। আরনেস্ট মাখের
এই নীতি মানব সমাজের
জন্যও সত্য বলেই মনে
করা যায়। এই যে
আমি অমনোযোগিতার কারণে কয়েক লিটার জল
এমনি এমনি নষ্ট করলাম
সেটা শুধু যে আমার
পকেটের উপরই প্রভাব ফেলল
তা নয়, ঐ জল
উৎপাদন করতে বিদ্যুৎ সহ
বিভিন্ন শক্তির ব্যবহারে প্রকৃতির যে ক্ষতি হবে
আমি তাতে নিজের অবদান
রাখলাম। একই ভাবে যে
ছেলেটি শুধু মনের খায়েস
মেটাতে প্রচণ্ড শব্দ করে মোটর
বাইক চালিয়ে চলে গেল, শব্দ
দূষণের মাধ্যমে সে নিজেও প্রকৃতির
অনেকটাই ক্ষতি করল। অর্থাৎ আমাদের
যেকোনো অবহেলা বা সময় মত
অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা দুদিন
আগে হোক আর দুদিন
পরে হোক, আমাদের সবার
জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে।
সিএএ বিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে দিল্লী হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। সিএএর ব্যাপারে নিজের মতামত এর আগেই লিখেছি। খোদ ভারতে এর পক্ষে ও বিপক্ষে ব্যাপক সমর্থন আছে। তবে এটা ঠিক, যেভাবে আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেটা অন্তত এই মুহূর্তে ঐক্যের চেয়ে বিভেদের জন্মই দিচ্ছে বেশি করে। স্ট্যালিন বলতেন, লক্ষ্য অর্জনে যেকোনো পথই ঠিক। বর্তমান বিশ্বে বিরাট সংখ্যক মানুষ সেটা প্রত্যাখ্যান করছে।
সিএএ বিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে দিল্লী হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। সিএএর ব্যাপারে নিজের মতামত এর আগেই লিখেছি। খোদ ভারতে এর পক্ষে ও বিপক্ষে ব্যাপক সমর্থন আছে। তবে এটা ঠিক, যেভাবে আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেটা অন্তত এই মুহূর্তে ঐক্যের চেয়ে বিভেদের জন্মই দিচ্ছে বেশি করে। স্ট্যালিন বলতেন, লক্ষ্য অর্জনে যেকোনো পথই ঠিক। বর্তমান বিশ্বে বিরাট সংখ্যক মানুষ সেটা প্রত্যাখ্যান করছে।
মনে
হতে পারে অথবা রাজনৈতিক,
কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন সমীকরনে ফেলে অনেকেই ভাবতে
পারে, এটা ভারতের আভ্যন্তরীন
ব্যাপার। আমরা বলার কে?
সেটা নির্ভর করে আমরা কোন
দিক থেকে ঘটনাটা দেখছি।
জাতিগত বা রাষ্ট্রীয় দিক
থেকে দেখলে সেটা হয়তো তাই।
কিন্তু যদি মানবিক দিক
থেকে দেখি? এদেশেই উচ্চারিত হয়েছিল "সবার উপর মানুষ
সত্য তাহার উপর নাই।" হ্যাঁ,
মানবিক দিক থেকে দেখলে
আমরা দেখব ভারতের এই
সহিংসতায় মুসলমান বা হিন্দু মরছে
না, মরছে মানুষ, মরছে
মানবতা। আমাদের প্রতিবাদটা হওয়া উচিত তাই
মুসলমান বা হিন্দুর মৃত্যুর
বিরুদ্ধে নয়, মানুষের মৃত্যুর
বিরুদ্ধে, মানবতার মৃত্যুর বিরুদ্ধে। আর আমরা যদি
এর স্থায়ী কোন সমাধান চাই,
আমাদের এর উৎস খুঁজে
বের করা উচিৎ। যতক্ষণ
না আমরা রোগের কারণ
নিয়ে কথা না বলব,
কারণ খুঁজে তা নিয়ে কথা
না বলব, ওষুধ দিয়ে
আমরা শুধু সাময়িক ভাবে
রোগের উপশম করতে পারব,
স্থায়ী রোগমুক্তি তাতে হবে না।
আমি
বিভিন্ন সময়ে লিখেছি, বলেছি,
বিশ্বাস করি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ
নামে এই যে মাইন
আজ আমাদের সমাজের ঘরে ঘরে স্তরে
স্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার ডিটেনাটর
রয়েছে সেই ১৯৪৭ সালে,
দেশ ভাগের ইতিহাসের মধ্যে। দেশ ভাগই হিন্দু
আর মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান ঘৃণা আর বিদ্বেষ
থেকে তাদের রক্ষা করতে পারে এই
শ্লোগান দিয়ে পাকিস্তানের জন্ম
হলেও কার্যত সেটা হয়নি। পাকিস্তান
সৃষ্টির পেছনে ছিল ভাঙ্গনের ডাক,
গড়ার নয়। আর সে
কারণেই মনে হয় পাকিস্তান
আজ ব্রিটিশ ভারত প্রসুত ব্যর্থ
সন্তানের এক নাম। যতদিন
এই ধর্মীয় বিদ্বেষ থাকবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাত্রায়
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা থাকবেই। আর এসবের মূল
যতটা না ধর্মে তার
চেয়ে বেশি রাজনীতিতে। রাজনীতিবিদরা
ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতার পাশা
খেলছে। সেটা যদি না
হত, তাহলে আজ আমরা দিল্লীতে
শুধু হিন্দু মুসলমানের খুনোখুনিই দেখতাম, কোন হিন্দু যুবককে
মুসলিম প্রতিবেশিদের রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুর
সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে দেখতাম না
বা কোন মুসলমান আবেদ
আলীকে আহত হিন্দু যুবকের
জন্য রক্ত দিতে দেখতাম
না। দিল্লীর ঘটনা এক দিকে
যেমন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দানবীয় মুখোশ উন্মচন করেছে, অন্য দিকে মানুষকে
শিখেয়েছে বিপদের সময় পরস্পরের পাশে
দাঁড়াতে, টিকি দাড়ি ফেলে
মানবতার জন্য লড়াই করতে।
তাই আমার মনে হয়
এখনও সব কিছু শেষ
হয়ে যায়নি। যদি আমরা এই
লড়াইকে সাম্প্রদায়িক চেহারা না দিয়ে দানবের
বিরুদ্ধে মানবের লড়াই হিসেবে দেখতে
পারি, সামনে নিয়ে যেতে পারি
- শুধু ভারত নয় উপমহাদেশও
অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
মনে
পড়ছে ৯০ দশকের কথা।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেছে। সমাজতান্ত্রিক
ব্লক আর নেই, নেই
ওয়ারশ জোট। তখন যদি
ন্যাটো বিলুপ্ত করা হত বা
ন্যাটো সম্প্রসারিত করা না হত,
তাহলে আজ বিশ্ব যেসব
বিপদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে
সেটার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যেত। ইসলামিক
স্টেট করার দরকার হত
না, দরকার হত না একের
পর এক বিভিন্ন রঙের
গণতান্ত্রিক বিপ্লবের। রাশিয়াকে নিজেদের বিশ্বাসের জায়গায় না নিতে পারায়
শুরু হয়েছে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা।
আসলে পারস্পরিক অবিশ্বাস বজায় রেখে শান্তি
আনা যায় না। যতদিন
না ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ একে অন্যেকে বলবে
যে তারা নিজেরা যেমন
একে অন্যকে আক্রমণ করবে না তেমনি
অন্য কোন দেশ বা
গোষ্ঠীকে তাদের মাটি ব্যবহার করে
প্রতিবেশি দেশ আক্রমণ করতে
দেবে না ততদিন পর্যন্ত
এ দেশগুলো রাষ্ট্রীয় ভাবে পরস্পরের প্রতি
আস্থা রাখতে পারবে না। আর সেটা
যাতে পারে তার জন্য
শুধু কথা দেওয়া বা
অনাক্রমন চুক্তিই যথেষ্ট নয়, সরকারী ভাবে
নিজ নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের
বিশেষ করে হিন্দু এবং
মুসলিমদের নাগরিক অধিকার রক্ষায় যত্নবান হতে হবে। কারণ
একমাত্র তখনই দেশগুলোর মৌলবাদী
শক্তি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি
করে রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্পে বিষাক্ত
করতে পারবে না।
ফেসবুকে
এখন আমার মত অনেকেই
সিএএর বিরুদ্ধে, দিল্লীর আক্রমনের বিরুদ্ধে লিখছেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস যখন
পাকিস্তান বা বাংলাদেশে অনবরত
বিভিন্ন ভাবে সংখ্যালঘু, বিশেষ
করে হিন্দুদের উপর বিভিন্ন অত্যাচার
হয় (সেটা পাকিস্তানে হিন্দু
মেয়েদের কিডন্যাপ ও ধর্মান্তরে বাধ্য
করা, বাংলাদেশে জমিজমা, বাড়িঘর দখল করে দেশত্যাগে
বাধ্য করা - এটা যে প্রায়
প্রতিদিন ঘটছে পত্রপত্রিকার খবরেই
তা উঠে আসছে, এছাড়া
রামু, ভোলা এসব তো
বেশিদিন আগের কথা নয়)
তখনও যদি আপনারা একই
ভাবে সোচ্চার হতেন হয়তো ভারতে
ঘটনা এতদূর নাও যেতে পারত।
অবস্থা এমন যে বাংলাদেশ
বা পাকিস্তানে যেমন হিন্দুদের ভারতের
দালাল বলে রাজনীতি করা
হয়, একই ভাবে ভারতেও
মুসলিমদের পাকিস্তানের দালাল বলে রাজনীতি করা
হয়। আজ আমরা ফেসবুকে
দিল্লীর দাঙ্গার প্রতিবাদ করি, দিল্লীতে হিন্দু
মুসলিম সম্প্রীতির খবর বা ছবি
প্রকাশ করি, একই ঘটনা
কি আমরা রামু, ভোলা
বা অন্যান্য ক্ষেত্রে করতে পেরেছি?
পৃথিবীর
প্রায় সবাই নিজেকে শোষিত,
বঞ্চিত মনে করে। আমার
দাবিটা আমার অধিকার আদায়ের
দাবি, আপনার একই দাবি আমার
অধিকারে ভাগ বসানোর অন্যায়
দাবি। আমরা কখনোই নিজেকে
অন্যের জায়গায় বা অন্যকে নিজের
জায়গায় বসিয়ে ঘটনা বিশ্লেষণ করতে
পারি না। আমরা মনে
করি আমিই ঠিক, অন্যেরা
ভুল। প্রতিপক্ষকে, প্রতিবেশিকে বুঝতে না চাওয়ার সংস্কৃতি
আমাদের ক্রমাগত পরস্পর বিরোধী অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা
সবাই শান্তির জন্য যুদ্ধ যুদ্ধ
খেলছি। আমরা আজকের কথা
ভেবে ভবিষ্যতের কথা ভুলে যাই।
আচ্ছা বলুন তো, যদি
দেশ ভাগ না হত,
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কত মানুষ মরত?
কত মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হত? সেটা
কি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে নিহত তিরিশ লাখ
ছাড়িয়ে যেত? সেই তিরিশ
লাখ প্রাণ, দু লক্ষ মা
বোনের ইজ্জত এ সবই কিন্তু
দেশ ভাগের ফল। আর বিগত
সত্তর বছরে প্রতি দিন
এর সাথে যোগ হচ্ছে
অসংখ্য গুজরাট, রামু, ভোলাসহ অনেক নাম নাজানা
স্থান। এসব পাইকারি। খুচরো
প্রানের কথা না হয়
নাই বললাম।
হ্যাঁ,
মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে, মোদীকে
না বলতে হবে, কিন্তু
শুধু শ্লোগান দিয়েই কি কাজ হবে?
সেই সাথে আমাদের প্রতিবেশি
সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
জনগণকে, বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষকে
বলতে হবে এটা ধর্ম
যুদ্ধ নয়, এটা হিন্দু
মুসলমানের যুদ্ধ নয়, এটা তাদের
দারিদ্র্যকে, তাদের অজ্ঞানতাকে পুঁজি করে নষ্ট রাজনীতিবিদ
আর ধর্ম ব্যাসায়ীদের ক্ষমতা
ও দেশের ধন সম্পদ কুক্ষিগত
করার কৌশল। তোমাকে ওয়াজ শুনিয়ে সে
তোমার দুঃখের সময় পাশে এসে
দাঁড়ায় নি, বরং কোটি
কোটি টাকা নিয়ে অন্য
দেশে মহা আয়েশে জীবন
যাপন করছে। তোমাকে বেহেশতের স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেরা মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা না করে পৃথিবীতেই
বেহেশতের সুখ উপভোগ করছে।
আসলে সমস্যার শিকড় এত গভীরে
ঢূকে গেছে যে এক
দিনে এর সমাধান সম্ভব
নয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে
এ সমস্যা আমাদের মনের গভীরে ঢুকে
গেছে, সমাধানের জন্যও তাই প্রজন্মের পর
প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হবে প্রতিদিন
সমাধানের জন্য নিরন্তর কাজের
মাধ্যমে। আমরা কি সেটা
করতে চাই, নাকি শুধুমাত্র
গুজরাট বা দিল্লীতে আগুন
জ্বললে শ্লোগান দিয়ে আমাদের দায়িত্ব
শেষ করতে চাই সেটাই
বড় প্রশ্ন।
দিল্লীর
দাঙ্গাকে অনেকেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করছে।
সেটা কি আসলেই তাই।
কই সেখানে তো প্রতিবেশী হিন্দু
- মুসলমান একে অন্যকে মারছে
না, তারা বরং নিজেদের
জীবন বিপন্ন করে পরস্পরকে রক্ষা
করছে। এটা হিন্দুদের নয়,
মুসলমানদের উপর বহিরাগত হিন্দুত্ববাদীদের
পূর্ব পরিকল্পিত আক্রমণ। তারা চাইছে এটাকে
সাম্প্রদায়িক রূপ দিতে। এখনও
পারছে না হিন্দু সমাজ
সেটা প্রত্যাখ্যান করেছে বলে। তাই আমরা
যদি এটাকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে উত্তজনামূলক স্ট্যাটাস
দিই সেটা উপমহাদেশের অন্যান্য
স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করবে। আর
তাতে আমরা বিজেপির হাতকেই
শক্তিশালী করব। আমার মনে
হয় দিল্লীর ঘটনা থেকে আমাদের
অনেক কিছুই শেখার আছে। তার অন্যতম
হল সাধারণ মানুষ চাইলে রাজনৈতিক দল বা ধর্মান্ধ
গোষ্ঠীর পরিকল্পিত বিভিন্ন দাঙ্গা রোধ করতে না
পারলেও সেটাকে সর্বগ্রাসী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ দেবার তাদের
প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে পারে।
ভারতের বর্তমান ঘটনা থেকে আরও
যে শিক্ষাটা আমরা নিতে পারি
তা হল, সমাজে সুপ্ত
সাম্প্রদায়িকতা বা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের
প্রতি পারস্পরিক অবিশ্বাস যতই থাক না
কেন, সরকার বা প্রশাসন যদি
নিরপেক্ষ ভাবে আইনের প্রয়োগ
করে সমাজের দুর্বল শ্রেনী, বিশেষ করে সংখ্যালঘুরা নিজেদের
ততটা অসহায় মনে করে না।
সব দেশেই প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র তাকে রক্ষা করবে
এ বিশ্বাস নিয়েই বাঁচে। বিগত কয়েক বছরে
ভারতে সামাজিক বা সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির
অবনতি ঘটলেও সেটা বৈপ্লবিক নয়।
কিন্তু যখনই কেন্দ্রীয় সরকার
পক্ষপাত দুষ্ট অবস্থানে চলে গেছে, ভারতের
মুসলমান নিজেকে আর আগের মত
নিরাপদ মনে করতে পারছে
না। যেকোনো দেশের সমস্ত মানুষ যাতে নিজেদের নিরাপদ
মনে করতে পারে, সরকার,
প্রশাসন ও আইনের প্রতি
আস্থা রাখতে পারে সে জন্যেই
আইন বা সংবিধান হওয়া
উচিত নিরপেক্ষ। সেটা যেমন ভারতের
জন্য সত্য, তেমনি সত্য বাংলাদেশ, পাকিস্তান
বা অন্য যেকোনো দেশের
জন্য। ন্যায়পরায়ণতার অর্থ কারও প্রতি
দুর্বলতা নয়, সবার অধিকারের
প্রতি সমান ও নিরপেক্ষা
দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করা। পৃথিবীতে
ধনী দেশের সংখ্যা কম নয়, তারপরেও
শুধু হাতে গনা কয়েকটি
দেশ নাগরিকদের জন্য প্রায় স্বর্গে
পরিণত হতে পেরেছে, সোনার
দেশে পরিণত হতে পেরেছে। সেটা
তারা পেরেছে সবার জন্য আইনের
শাসন কায়েম করে, সবার সাংবিধানিক
অধিকার নিশ্চিত করে। তারা প্রমাণ
করেছে মাটির পৃথিবীতেও স্বর্গ তৈরি করা যায়।
ওরা পারলে আমরা পারব না
কেন? পারব, যদি আমরা জাতি,
ধর্ম, বর্ণ এসবের ঊর্ধ্বে
উঠতে পারি। সেজন্যে দরকার আত্মশোধনের, নিজেকে বদলানোর, পাশের মানুষকে বদলানোর। বর্তমানে সেটা আমরা করছি
না, করছে যারা মানুষকে
পরলোকে বেহেশতের স্বপ্ন দেখিয়ে ইহলোককে নরকে পরিণত করার
ধান্দায় আছে। ওদের রুখতে
হবে।
দুবনা, ০১ মার্চ
২০২০
Comments
Post a Comment