চিন্তার কানাগলিতে করোনার পথচলা
রুশরা বলে "বিলো বি ঝেলানিয়ে, পোভদ নাইদিয়তসা" মানে যদি ইচ্ছে থাকে কারণ খুঁজে বের করা যাবে। ধার্মিকেরা সব কাজেই ঈশ্বরের হাত দেখতে চায়, তাই যে যাই বলুক তারা যে ঈশ্বরের নামে ভালমন্দ সব কিছুকে জায়েজ করবে তাতে অবাক হবার কি আছে।
মনে আছে, যখন চীনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটল, তারা কিভাবে উইঘুরি মুসলমানদের উপর চীন সরকারের অত্যাচারের শাস্তি স্বরূপ এটাকে চীনের উপর ঈশ্বরের গজব বলে চালাল। ভারতে এটা ঘটলে সেটা দেখা হবে কাশ্মীর বা সম্প্রতি দিল্লির হত্যাকাণ্ডের কারণে সৃষ্টিকর্তার সতর্ক বানী রূপে। আবার যদি বাংলাদেশে এটা ঘটে তাহলে দোষ পড়বে নাস্তিক, সংখ্যালঘু - এদের ঘাড়ে। আর এসব অভিযোগ শুধু অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত মানুষই করে না, অনেক বিশাল বিশাল ডিগ্রিধারী লোকজনও করে। একই ঘটনার কথা বলা যাবে গেরুয়াদের সম্বন্ধে, করোনা কাণ্ডে না হলেও অন্যান্য কাণ্ডে।
রোগের শুরুতে দোষ দেওয়া হল হারাম মাংসকে কিন্তু ইরান বা সউদি আরবের হালাল মাংস করোনা ঠেকাতে পারল না।
আসল কথা, ঘটনার অব্জেক্টিভ বিচার নয়, নিজেদের সুবিধামত কারও ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়া। আর এর মাধ্যমে ঈশ্বরের মাহাত্ম্য প্রচার করা। এটা যে শুধু পৈতে বামুন বা কাট মোল্লারা করে, তাই নয়। উন্নত বিশ্বেও সেটা ঘটে। যেকোনো ঘটনায় রাশিয়ার (এখন যোগ হয়েছে চীন) দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো ওদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর এর মাধ্যমে ঈশ্বরের সাবস্টিটিউট লিবেরালিজমকে ঐশ্বরিক মাহাত্ম্যে ভূষিত করার চেষ্টা চলছে।
ঈশ্বর মানুষের সবলতা নয়। ঈশ্বর মানুষের সীমাবদ্ধতা। মানুষ যখন নিজে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারে না বা সমাধান করতে চায় না তখন সে সেটা ঈশ্বরের কাছে চালান দিয়ে দেয় ঠিক যেমন অফিসের ছোট বাবু সমস্যার সমাধান করতে আপনাকে পাঠায় বড় বাবুর কাছে।
আসলে মানুষ যখন র্যাশনালি চিন্তা করার ক্ষমতা হারায়, সত্যের চেয়েও গোষ্ঠী স্বার্থ যখন মানুষের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন করোনার মত বিশ্ব বিপর্যয় মানব সভ্যতার ভিত্তি নাড়িয়ে দেয়।
আমার এখনও মনে আছে একাত্তরের দিনগুলোর কথা। এখন যেভাবে দেশে সব কিছু লক ডাউন করা হচ্ছে, একাত্তরেও সেটা ঘটেনি। তাই এ যুদ্ধ অন্য যেকোনো যুদ্ধের চেয়ে অনেক ভয়ঙ্কর। করোনা বিদায় নেবে, কিন্তু থাকবে তার শিক্ষা। বায়োলজিক্যাল মারণাস্ত্র কিনা জানি না, তবে এসব অস্ত্র যে মানুষের কনট্রোলের বাইরে চলে যেতে পারে করোনা সেটাই প্রমাণ করল। তাই করোনা পরবর্তী মানব সমাজের অন্যতম প্রধান কাজ হওয়া উচিৎ বায়োলজিক্যাল মারণাস্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
দুবনা, ২২ মার্চ ২০২০
Comments
Post a Comment