সুখ
সোমবার থেকেই অন-লাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছি। কতদিন চলবে কে জানে? তবে গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক থেকেই আমাকে একটা মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিতে হবে এক্সটেনশনের জন্য, তাই সোমবার রাতে মস্কো আসা। গতকাল টেস্টগুলো দিয়ে এলাম, আগামী কাল সব ঠিক থাকলে সার্টিফিকেট পাব। তাই মস্কো থেকে যাওয়া। গতকাল এবার যারা আমার আন্ডারে গ্রাজুয়েশন করছে, দেখা করতে চাইলো। ডিপার্টমেন্টে গেলাম। আগামী দু মাসে কি কি করতে হবে বুঝিয়ে দিলাম। মনে পড়লো নিজের ছাত্র জীবনের কথা। কোনো জরুরি কাজ না থাকলেও ইউরি পেত্রোভিচের জন্য বসে থাকতাম, দেখা করতাম। সব সময়ই নতুন কিছু না কিছু জানা হত। ছাত্ররা বিভিন্ন প্রশ্ন করছিল। এসব প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে ওরা যে শুধু নতুন কিছু জানতে পারে তা নয়, আমি নিজেও অনেক কিছু শিখি, একটু ভিন্ন ভাবে সমস্যা নিয়ে ভাবি। কখন যে আড়াই ঘন্টা সময় কেটে গেলো, টেরই পেলাম না।
বাসায় তেমন কিছু করার নেই, মানে বই পড়া, ফেসবুকে বসা ইত্যাদি ছাড়া। অনেকদিন টিভিটা পড়ে ছিল, সেটা সেট করলাম। মনিকার খরগোশ রান্না করার কথা ছিল। ও বাইরে থাকায় দোকানে গেলাম মুরগী কিনতে। রান্না, খাওয়া এসব আর কি!
রাতে সেভার সাথে গল্প। কসমোলজি থেকে শুরু করে জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে। করোনা ভাইরাসও বাদ পড়েনি। আমার মতোই বিদ্রোহী। সব কথাতেই পাল্টা যুক্তি বের করে। কখনও একমত হয়, কখনও হয় না। আমিও কিছুই চাপিয়ে দিই না। সবাইকে নিজেই নিজের পথটা পেরিয়ে আসতে হয়। জীবনের কোন শর্টকাট রাস্তা নেই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মনিকা ডিম ভাজছে। হঠাৎ ডিম খেতে মন চাইল। চাইলে অবশ্য ও ভেজে দিত। একটু গা এলিয়ে দিলাম বিছানায়। এরপর সেভা ঘুম থেকে উঠলে জিজ্ঞেস করলাম
ডিম ভাজতে প্যারিস?
হ্যাঁ।
ভাজবি আমার জন্য?
কয়টা ডিমের মামলেট করব?
দুটো।
ডিম আস্ত রাখবো বা ভাঙব?
আস্ত রাখ।
ডিম ভাজতে যে এতগুলো প্রশ্নের উত্তর জানতে হয় সেটা আগে মনেই হয়নি। কিছুক্ষণ পরে সেভা জানালো মামলেট প্রস্তুত। বলতেই পারতাম সার্ভ করতে। উঠে নিজেই নিলাম। সাথে এক কাপ চা। একসাথে এতো সুখ ভালো না।
মস্কো, ২৫ মার্চ ২০২০
Comments
Post a Comment