রান্না

পাপ, তুমি খাবে?

গত রোববার রাতে বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই ক্রিস্টিনার প্রশ্ন।

আমি এখনও দোকানে যাইনি। দাড়া, বাজার করে এনে রান্না করছি।
দরকার নেই, রান্না আমিই করছি।

আমি তো অবাক। দেখি ক্রিস্টিনা মুরগী কেটে কেটে ফ্রাই প্যানে ছাড়ছে। আমি মাংস বা মাছ কাটতে গেলে হাজার বার হাত ধুই। মাছ হলে তো কথাই নেই। কেটে স্নান না করলে গা ঘিন ঘিন করে। ওদের দেখি দিব্যি ধরছে, কাটছে ঠিক আমি যেমন বই নিয়ে নাড়াচাড়া করি।

কি রান্না করিস?
মুরগী।
ভালো হয়?
সেভার পছন্দ।

বাড়িতে সবার ধারণা সেভা বা মনিকা পছন্দ করলে আমার পছন্দ না হয়ে উপায় নেই। অনেক আগে, যখন ওরা ছোট ছিল আর বেতন পাওয়ার আগেই টাকা শেষ হয়ে যেত, বউ বলত "সেভা বা মনিকার জন্য এটা কেনা খুব দরকারি।" আর রাজী হলেই বলত "ক্রিস্টিনা, আন্তন - ওদের জন্যে কিনলেও মন্দ হয় না।" ওটা ছিল টোপ। গিলেছ তো মরেছ।

ঠিক আছে। কিছু লাগবে? যাব দোকানে?
একটু চিজ কিনতে পার আর মূলা।
টম্যাটো, শসা এসব আছে। লেবু?
ঠিক আছে, আন।

গেলাম উছাচেভস্কি রিনকের পাশে সুপার মার্কেটে। ওদিকে গেলে নিজের অজান্তেই হোস্টেলের জানলার দিকে তাকাই। সেখানে দীপু আর শেফালি আপা থাকত। আমি ছিলাম নিত্য দিনের অতিথি। মনে হয়, এই বুঝি জানালা খুলে দীপু বলবে, চলে আয়।

কেনাকাটি করে বাসায় ফিরছি, ক্রিস্টিনার ফোন

তুমি কোথায়?
এইতো আসছি।

অনেক দিন একা থেকে অভ্যস্ত, তাই এরকম ফোন এলে অবাক লাগে। এখন অফিসে দেরি হলে মানে যদি রাত ৯ টা ১০ টা বেজে যায়, বউ ফোন করে জানতে চায়। আগের মত নেই, রাত ১০, ১১, ১২ যখন খুশি এলাম, কোন কৈফিয়ত দিতে হবে না। ইদানীং মনিকা, সেভাও মাঝে মধ্যে ফোন করে। এমনিতেই।

কিছু দরকার?
না, এমনিতেই ফোন করলাম জানতে তুমি কেমন আছ।

ছেলেমেয়েরাও কেমন যেন বড় আর সামাজিক হয়ে যাচ্ছে।

ক্রিস্টিনা খাবার বেড়ে দিল। ভাত, মুরগী, তার উপর টম্যাটো আর সবার উপরে সালাদের পাতা। খাবার তো নয়, একেবারে শিল্প। এসব আমার তেমন ভালো লাগে না, কেননা তখন এটা নষ্ট করে খেতে মন চায় না।

পাপ, ওভেনে ফ্রেঞ্চ স্টাইলে মাংস রান্না করা আছে। খেতে পার।

মনিকা বলল ওর ঘর থেকে।

তুই রাঁধলি?
হ্যাঁ, গতকাল।

একটু নিয়ে খেলাম, বেশ টেস্টি। আলু, পোর্ক, চিজ ইত্যাদির সমন্বয়ে বেশ ভারি খাবার।

সোমবার ভার্সিটি থেকে ফিরে দেখি ক্রিস্টিনা আবার রান্না করছে। অনেক দিন থেকেই চাইছিলাম ওরা রান্না করুক। তবে এতদিন বাইরে বাইরে খেত। সেভার হত সমস্যা। ওকে মূলত রেডিমেড খাবার কিনে গরম করে খেতে হত। এখন ওর সোনায় সোহাগা। দু' বোন যাই রান্না করুক, এক প্লেট করে খাবার সেভার ঘরে পৌঁছে দেয়। আমি নিজেও বাড়ির সবচেয়ে ছোট, সবার আদরের। সবার কাছ থেকে ভাগ পেতাম। সেভা আমার পথেই হাঁটছে।

দুবনা, ১৮ মার্চ ২০২০

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা