ঘাস

গতকাল ভোলগার তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরছি, একজন প্রশ্ন করলেন 
কিসের ছবি তুলছ? 
তাঁর বুকে ঝুলছে ক্যানন ক্যামেরা। বয়স্ক। সত্তর মত হবে। 
ঘাসের? 
ও! আমি ভাবলাম ওখানে কাঠবিড়ালি বসে আছে কিনা? 
না না। 
বলে আমি তাঁকে সেই ঘাস দুটো দেখালাম। 
তুমি কি ইন্ডিয়া থেকে? 
না। বাংলাদেশ। 
একই কথা। আগে এক দেশ ছিল। 
হ্যাঁ। 
তোমাদের ওখানে এ ধরণের ঘাস হয় না? 
হয় নিশ্চয়ই। 
তাহলে? এতে ইন্টারেস্টিং কি আছে?
আসলে প্রকৃতিতে সব কিছুই ইন্টারেস্টিং। আমরা নিজেরাও তো প্রকৃতির অংশ। 
তুমি কি ইনস্টিটিউটে কাজ কর? 
হ্যাঁ। 
কোথায়? 
ইনফরমেশন টেকনোলজি ল্যাবে। 
আমি ভাবলাম থিওরিতে। 
আমি থিওরি নিয়েই কাজ করি, কসমোলজির উপর। 
কি নাম তোমার? 
বিজন। বিজন সাহা। 
আচ্ছা। তোমার প্রদর্শনীতে আমি গেছিলাম।  
হ্যাঁ, অনেক আগের কথা। 
আমার নাম ভ্লাদিমির, ভালদিয়া। মালিউক। 
নাম শুনেছি। 
আমি হাই এনার্জিতে কাজ করতাম। এখন পেনশনে। 
আচ্ছা। 
তুমি জান সাহা নামে আমাদের এক রিপাবলিক আছে? 
জানি। আর বিজন নামে একাধিক নদী আছে। 
কি ক্যামেরা তোমার? 
ক্যানন আরপি। 
আমার ক্যামেরাটা নষ্ট হয়ে গেছে, এখন এটা নিয়ে ঘুরছি। জানি না কোথায় মেরামত করা যায়। 
আপনি বৃহস্পতিবার আমাদের ক্লাবে আসেন। ওখানে কেউ না কেউ ঠিক বলে দেবে। 
ঐ পাড়ে? 
না, ওখানে অব্রাজ। 
নভঝিলভ? 
হ্যাঁ। আমি ওখানেও যাই। তবে আপনি ফোকাসে আসেন। এটা স্টেডিয়ামের ওখানে।   
মাকুরচকিনা?
উনি এখান আসেন না। গ্রোমভ আছে। 
আচ্ছা। আপনি কি ধরণের ছবি তুলেন? 
সব, তবে মানুষের ছবি খুব একটা না। 
সেটা ভালো। মানুষের পেছনে ঘুরতে হয় তাদের ছবি দেবার জন্য। 
প্রস্তাকভাশিনোর শারিকের মত? 
অনেকটা তাই।  

ওনারা চলে গেলেন সূর্যাস্তের ছবি তুলতে, আমি বাসার দিকে। আসলে এই এক সমস্যা। সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়, সুন্দর ফুল বা ল্যান্ডস্কেপ এসবের বাইরেও যে বিশাল প্রকৃতি আছে সেটা মানুষ বুঝতে চায় না। ঘাসেরাও যে মানুষ, ওরাও যে কথা বলে, ছবি তুলতে চায় - সেটা ভাবে না। মানুষ কবে ঘাস হবে? 

দুবনা, ০২ জুলাই ২০২৩ 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা