মুখ ও মুখোশ

চৈত্র মাসে আমাদের এলাকায় চৈত্র পূজা হয়। বিভিন্ন মুখোশ পরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাচে লোকজন। অনেকে একাধিক মুখোশ পরে। লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এসব দেশেও মুখোশ পরে নাচার সংস্কৃতি বিদ্যমান। এমনকি দুর্গাপূজার সময় আমরা যে মহিষাসুরের দেখা পাই সেও একের পর এক রূপ বদলিয়ে শেষ পর্যন্ত মহিষের রূপ ধারণ করে। এসব কথা মনে হল সমন্বয়কদের মুখোশ খোলার প্রক্রিয়া দেখে। ছয় মাস আগে যারা শেখ মুজিবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল, শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলে মুখে ফেনা তুলত আজ তারাই নিজেদের জামাত শিবিরের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে জনসমক্ষে হাজির হচ্ছে। একদিকে তারা একাত্তরকে অস্বীকার করছে, অন্যদিকে বইমেলা আয়োজন, একুশের পদক, স্বাধীনতা পদক এসব দিয়ে যাচ্ছে। এসব দেখে মনে হতে পারে তারা সত্যিকার অর্থেই স্বৈরাচার বিরোধী ও বাংলাদেশের পক্ষের মানুষ। আমার সন্দেহ জাগে যে এরা আবারও নতুন রূপে আবির্ভূত হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা, যখনই নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হবে তখনই পুরানো পোশাক ফেলে নতুন পোশাকে অবতীর্ণ হবে। এটাও এখনও পর্যন্ত যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী তাদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরানোর মেটাক্যুলাস প্ল্যান। দিন দিন ওরা শক্তিশালী হচ্ছে আর আমরা দুর্বল হচ্ছি। তবে এখনও ওদের পায়ের নীচে মাটি ততটা শক্ত নয় বলেই একুশের আয়োজন। এখন যদি আমরা নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ি করি, আগস্টে কার কি ভূমিকা ছিল তা নিয়ে ঝগড়া করি আমাদের পতন কেউ সামলাতে পারবে না। মনে রাখবেন ওদের ভাষ্য অনুয়ায়ী যদি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ভারতীয় ষড়যন্ত্র হয়ও তারপরেও এর পেছনে জনসমর্থন ছিল বলেই বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছে। ভারতকে ভালোবেসে নয়, পাকিস্তানিদের শোষণ আর জুলুমে অতিষ্ঠ হয়েই মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়েছে। একই ভাবে চব্বিশেও যদি ষড়যন্ত্র থাকে সরকার পতনের মূল কারণ দুঃশাসন, স্বৈরাচারী শাসন। মানুষ কখনো দুঃশাসন চায়নি, আজও চায় না। এখন যদি দল মত নির্বিশেষে স্বাধীনতার পক্ষের সমস্ত শক্তি একসাথে এই মবতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারেন তাহলে সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন রক্ষা করার মত কিছুই আর থাকবে না এদেশে।

দুবনা, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

প্রশ্ন

পরিমল