অন্ধ জনে দেহ আলো

দেশ বিদেশের সব রাজনীতিবিদরা বাইডেন হয়ে গেছে। বাস্তবতা বলে যে একটি ব্যাপার আছে তা নিয়ে কেউ ভাবছে না বা তা নিয়ে ভাবার সাধারণ জ্ঞানটুকু তাদের লোপ পেয়েছে। সবাই নিজের একটা বিশ্ব তৈরি করে আনমনে উন্নয়নের খেলা খেলে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনে মনে হল তিনি বঙ্গভবন থেকে বক্তব্য রাখছেন জনগণকে নিজের উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে। কিন্তু এই উন্নয়নই যে তাঁকে আবারও ঘরছাড়া করল, তাঁর ভক্তদের রক্তে বাংলার মাটি ভিজিয়ে দিল সে বিষয়ে তাঁর কোন ধারণা আছে বলে মনে হল না। এ এক ভয়াবহ অবস্থা। আমার মনে হয় রাজনীতি, সমাজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা মাপার জন্য নতুন সিস্টেম ব্যবহার করা উচিৎ - প্রতিটি সাফল্যের জন্য পয়েন্ট যোগ করা আর ব্যর্থতার জন্য বিয়োগ করা। তাহলে হয়তো সাফল্যের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে নেতারা ব্যর্থতার কথাও মনে রাখবে আর সেজন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইবে। ষড়যন্ত্র যে যতই করুক, আওয়ামী লীগের পতনের মূল কারণ তাদের উপর জনতা আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। আওয়ামী লীগ যে সবার জন্য নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে এই বিশ্বাস মানুষ হারিয়ে ফেলেছিল। কেন মানুষ তাদের পাশে ছিল না সেজন্য ষড়যন্ত্র দায়ী নয়, দায়ী আওয়ামী লীগের নিজের অপকর্ম। এই সহজ সত্যটুকু উপলব্ধি করতে না পারলে না শেখ হাসিনা না আওয়ামী লীগ - কেউই পরিবর্তিত হবে না। আর যদি তা না হয় কেন বাংলার মানুষ আবার তাঁর দিকে ফিরে চাইবে? নিজের ভুল দেখতে, ভুল ধরতে শিখুন, সেটা স্বীকার করতে শিখুন, ভুল শোধরাতে শিখুন। তাহলে একদিন জনগণ আপনার ভালো কাজের পুরস্কার দেবে। কিন্তু ভুল স্বীকার করার জন্য সবার আগে যেটা দরকার তা হল মুক্তমনা হওয়া, কোন বিষয়ে বায়াস না হওয়া। মুক্তমনার প্রধান শর্ত নিজেকে অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্ত করা। পারবেন কি? সেই ডাক তো আপনাকে দিতে শুনলাম না। দেশ যে আজ চরম বিপদে আর সেই বিপদের শুরু আপনার বিগত দিনের অপরাজনীতি - সেই সত্য উপলব্ধি করেছেন বলে তো মনে হল না। আপনি জনতার কাছে বিচার দিলেন। কিন্তু গত আগস্টেই কি জনগণ সেই রায় দেয়নি? এটা ঠিক যে শাসক বাছতে তারা ভুল করেছে, কিন্তু আপনার শাসন থেকে মুক্তি চেয়ে তারা কিন্তু মোটেই ভুল করেনি। এখনও আপনি পারেন দেশকে এই বিপদ থেকে বের করে আনতে। কিন্তু সে জন্য যে ত্যাগ আপনাকে করতে হবে তা করতে কি আপনি প্রস্তুত? পারবেন কি আওয়ামী লীগকে নতুন করে গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দিতে? না পারলে দেশকে শুধু হারানোর হিসেবই করতে হবে কয়েক প্রজন্ম ধরে।

দুবনা, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

প্রশ্ন

পরিমল