বিজয়ের বিড়ম্বনা
অদ্ভুত কিছু লেখা দেখছি আছ ফেসবুকে আর বিভিন্ন গ্রুপে। এটার শুরু মনে হয় ভারত সরকার ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়কে ভারতের বিজয় বলায়। ব্যাপারটা হচ্ছে ঘটনা মিথ্যে নয়। তবে এর আগে কখনও এ নিয়ে কোন বাকবিতন্ডা হয়নি। মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল। অন্যদিকে নভেম্বরের শেষে পাকিস্তান ভারতের পশ্চিম সীমান্ত আক্রমণ করলে সেটা ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে পরিণত হয়। ইতিহাস সেটাই বলে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর শুধু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে না, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের অবসান হয় আর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করে। যতদূর জানি এটা হয় নিয়াজীর উদ্যোগে। কারণ জেনারেল ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হলেও তার রেগুলার আর্মি ছিল না। সেক্ষেত্রে নিয়াজী অরোরার কাছে আত্মসমর্পন করা সম্মানজনক মনে করেন। তাই ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় উপলক্ষ্যে এই দিনটি পালন করে এতে আমাদের বিজয় প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। বিভিন্ন সময় একাধিক দেশ বিভিন্ন যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং প্রতিটি দেশ নিজের নিজের মত করে দিনটি পালন করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এর রিপাবলিকগুলো নিজের মত করেই ৯ মে বিজয় দিবস পালন করে। তাই ভারত যদি বিজয় দিবস পালন করে এতে ইতিহাসের বিকৃতি হয় না। এতে বাংলাদেশের বিজয়ের মহিমাও এক ফোঁটাও কমে না। অন্যদিকে কেউ কেউ এই ঘটনা ভিন্ন ভাবে দেখার চেষ্টা করছে, বলার চেষ্টা করছে যে এটা আসলে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ। ভারত যুদ্ধ করে পাকিস্তান ভাগ করেছে। এটা শুধু ইতিহাসের বিকৃতি নয়, তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের অবমাননা, আমাদের নিজেদের বিজয়ের গৌরবকে ভূলুণ্ঠিত করা। দুঃখজনক ব্যাপার হল অনেক রাজনীতি সচেতন প্রগতিশীল মানুষ কি এক অজ্ঞাত কারণে এসব নন-ইস্যুকে ইস্যুতে পরিণত করে নিজেদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা প্রশ্নের সম্মুখীন করছেন। ইতিহাস থেকে স্বাধীন হতে গিয়ে অনেকেই নিজেদের অন্ধবিশ্বাসের কাছে পরাধীন হচ্ছেন। এখন দেশে অনেকেই স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় - জাতির অস্তিত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে। দেখবেন আপনাদের এসব পপুলিস্ট স্ট্যাটাস যেন এদের হাতে একাত্তর বাতিলের নতুন অজুহাত না হয়।
মস্কো, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Comments
Post a Comment