জাতীয় ঐক্য

সব দেখে মনে হয় দেশে নতুন করে রাজনৈতিক বিন্যাস শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় ঐক্য হয় কীভাবে? হলে সেটা হবে কাঁঠালের আমসত্ত্ব।

২০০১ সালে যখন বিএনপি নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল রূপে আত্মপ্রকাশ করে তখেন ফেসবুক ছিল না। তবে বন্ধুদের সাথে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হত। আওয়ামী লীগের বন্ধুদের বলেছিলাম,

- তোমাদের উচিৎ বিএনপিকে সরকার গঠন করতে সমর্থন করা।
- বলেন কী? এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
- দেখ, আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। ভাবমূর্তি এমনিতেই নষ্ট হয়েছে। কিন্তু বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থন দিলে সেটা মহানুভবতার পরিচয় হবে। কিন্তু আসল কথা হল তাহলে বিএনপিকে জামাতের সাথে আঁতাত করার ক্ষেত্রে দুইবার ভাবতে হবে। করলে বিএনপির সমালোচনা করতে পারবে, না করলে জামাত ক্ষমতা থেকে দূরে থাকবে।

কিন্তু তখন কেউ এসবে পাত্তা দেয়নি। এখন আবার আওয়ামী লীগ নিয়ে দুটো কথা বলা যায়। বর্তমান সরকার যদি আওয়ামী লীগকে জাতীয় ঐক্যের জন্য ডাকে তাহলে যেকোনো পরিস্থিতিতেই তারা লাভবান হবে। কারণ -

প্রথমত আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কিছু করলে সেটা সারা বিশ্বে সমালোচনার শিকার হবে। তাই তাদের ডাক দিয়ে সরকার এই সমালোচনা এড়াতে পারবে।
দ্বিতীয়ত আওয়ামী লীগ যদি এই ঐক্য এড়িয়ে যায় তাহলে তার সমস্ত দায় আওয়ামী লীগের উপর বর্তাবে। শুধু বিদেশে নয়, দেশের ভিতরেও নেগেটিভ সমালোচনা এড়ানো যাবে।
তৃতীয়ত যদি আওয়ামী লীগ যোগ দেয় তাহলে তাকে বিগত দিনের ভুল স্বীকার করেই আসতে হবে। আর এলে কার নেতৃত্বে আসবে? প্রথম সারির সব নেতারা পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে। সেক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। এটা আওয়ামী লীগের মধ্যে বড় ধরণের সংকটের সৃষ্টি করবে। এটা হতে পারে আওয়ামী লীগের জন্য এক ধরণের শুদ্ধি অভিযান। সেটা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে পজিটিভ প্রভাব ফেলবে।
চতুর্থত, অনেকেই হয়তো ভাবছেন, আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিলে সে আবার ক্ষমতায় আসবে। সব কিছুরই সম্ভাবনা থাকে। তবে বর্তমানে সেই সম্ভাবনা কম যদি না বিএনপি এমন কিছু করে যা আওয়ামী স্বৈরাচারকেও ছাড়িয়ে যায়। তাই আওয়ামী লীগকে জাতীয় ঐক্যে যোগদানের আহ্বান অন্যান্য দলের জন্য লাগামের কাজ করবে।
দুবনা, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

পরিমল

প্রশ্ন