চাতক

তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে - মহামায়া কংসকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছিলেন। তবে কংসকে যিনি বধ করেছিলেন সেই শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন কংসের কারাগারে, তাঁরই রাজপ্রাসাদে। সেদিক থেকে দেখলে সবচেয়ে বড় শত্রু বেড়ে ওঠে নিজের ঘরেই। এটা প্রায় সমস্ত আইডোলজির জন্য সত্য। ধার্মিকরাই যে ধর্মের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তারাই মন্দির, মসজিদ, গির্জা ভাঙে, তারাই তাদের ভাষায় ঈশ্বরের সৃষ্টিকে অপমান বা খুন করে ঈশ্বরকে অসহায় করে তোলে। স্তালিন, মাও থেকে শুরু করে অনেক সমাজতন্ত্রী সমাজতান্ত্রিক আদর্শের কম ক্ষতি করেনি। এখন গণতন্ত্রীরা উঠেপড়ে লেগেছে গণতন্ত্রের বারোটা বাজাতে। আগে যে করেনি তা নয় তবে এত নগ্ন ভাবে করেনি। কিছুদিন আগে মলদোভার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সান্দো জয়লাভ করেছেন অভিবাসীদের ভোটে যদিও খোদ মলদোভায় হেরে গেছেন। তবে অভিবাসীদের মধ্যে শুধু যারা ইউরোপে তারাই ভোট দেবার সুযোগ পেয়েছে, রাশিয়ায় কর্মরত দশ লক্ষাধিক মলদোভার নাগরিক বলতে গেলে সেই সুযোগ বঞ্চিত হয়েছে যেহেতু এখানে মাত্র হাজার কুড়ি ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছিল। যারা নিজেদের খরচে দেশে গিয়ে ভোট দিতে চেয়েছিল তাদের বিভিন্ন সীমান্তে আটকে ভোটদানে বিরত রাখা হয়। রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুদ্ধ বিরোধী প্রার্থী জয়লাভ করলেও রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রেসিডেন্ট এখন ক্ষমতা ছাড়তে চাইছেন না। জর্জিয়ায় একই ভাবে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে। তবে কেউই সেটা প্রমাণ করতে পারছে না, বলছে আমেরিকা যেখানে এত অর্থ, বিত্ত, প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে সাহায্য করার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারছে না আমরা কিভাবে পারব? ইউক্রেনের জেলেনস্কির মেয়াদ তো কবেই উত্তীর্ণ। আর এ সবই হচ্ছে গণতন্ত্রের নামে। অগণতান্ত্রিক উপায়েই যদি গণতন্ত্র রক্ষা করতে হয় সেটা আর যাই হোক গণতন্ত্র থাকে না। তথাকথিত পশ্চিমা গণতন্ত্রের হাতেই আজ গণতন্ত্র ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সবাই জানে মনোপলি সব সময়ই ক্ষতিকর, তারপরেও সবাই ওদের বয়ানই বিশ্বাস করে। ধর্মকে আফিম বলে ত্যাগ করে গণতন্ত্রের আফিমে বুঁদ হয়ে থাকে সবাই। সমস্যা মনে হয় ধর্ম অধর্মে নয়, সমস্যা মানুষের প্রতারিত হতে চাওয়ার প্রবণতায়। মানুষ তো নয়, সবাই দাঁড়কাক - শেয়ালের কাছ থেকে প্রশংসা শোনার অপেক্ষায় বসে থাকা চাতক।

দুবনা, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

পরিমল

প্রশ্ন