নববর্ষ নিয়ে কিছু কথা

প্রকৃতির নিয়মে বছর ঘুরে আবার এলো পয়লা জানুয়ারি, নতুন বছরে প্রবেশ করল পৃথিবী। পৃথিবী বলাটা ঠিক নয়, কারণ একমাত্র মানুষ ব্যতীত আর কেউই দিন তারিখ বছরের হিসেব রাখে না। মহাবিশ্বে সবাই নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই ঘুরে – গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র – নিজের অক্ষের চারিদিকে আর একাধিক গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র নিয়ে গঠিত সিস্টেম নিজ নিজ ভরকেন্দ্রের চারিদিকে। নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘুর্ণন জন্ম দেয় দিনের, সিস্টেমের ভরকেন্দ্রের চারিদিকে ঘুর্ণন জন্ম দেয় বছরের। সেদিক থেকে বিচার করলে গতিই সবার স্থিতির মূলমন্ত্র। সাইকেল যেমন গতি ছাড়া ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না, মহাবিশ্বের কোন কিছুই তেমনি গতি ছাড়া স্থির থাকতে পারে না। দিন-রাত, শীত-বসন্ত এসবই প্রাকৃতিক, প্রকৃতির নিয়মে ঘটে। আর বিভিন্ন পঞ্জিকা মানুষের তৈরি – শুধুই নিজদের মূলতঃ ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য তৈরি, যদিও এখন আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে। শুনলাম দেশে আইন করে ৩১ ডিসেম্বর পালন নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে কেউ কেউ। আইন করে হয়তো বারের বা মাসের নাম বদলানো যায়, নববর্ষ বা অন্য কোন উৎসব পালন নিষেধ করা যায় – কিন্তু দিন রাত্রের ক্রমান্বয়, ঋতু পরিবর্তন এসব বন্ধ করা যায় না, বন্ধ করা যায় না গতি। আমাদের মহাবিশ্ব লার্জ স্কেলে হোমোজেনাস ও আইসোট্রোপিক। মানে এর নেই কোন বিশেষ বিন্দু বা দিক। একই ভাবে মহাবিশ্বের ইতিহাসে নেই কোন বিশেষ সময়। কিন্তু মানুষের সেটা আছে, আছে জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন বিশেষ মূহুর্ত যা তার জীবনকে সংজ্ঞায়িত করে। মহাবিশ্বে যেহেতু সব কিছুই আপেক্ষিক তাই আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই কোন না কোন স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলতেই হয়। এটা করতে হয় নিজেদের জন্য। একটি ক্যালেন্ডার নিষেধ করলে এর বিকল্প কিছু একটা করতে হয়। সমস্যা হল চাই বা না চাই আমরা এখন বিশ্ব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এসব উদ্যোগ দুদিনের জন্য ফালতু জনপ্রিয়তা দিলেও দিনের শেষে আবর্জনায় পরিণত হবে।

দুবনা, ০১ জানুয়ারি ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

পরিমল

প্রশ্ন