ইতিহাস

ফেসবুকে এবারের পাঠ্যপুস্তকে দেশের ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু লেখা দেখলাম। প্রায় সব লেখাতেই বইয়ে দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তার সমালোচনা করা হয়েছে। সেটা আমাদের একটাই শিক্ষা দেয় যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ইতিহাস লিখলে সেটা একদিন বুমেরাং হয়ে বেরিয়ে আসে। যদি সবাইকে তার প্রাপ্য সঠিক ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয় তাহলে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ইতিহাস পরিবর্তন করতে হয় না। সমস্যা হল যখন যারাই ক্ষমতায় আসে তখন তারা মনে করে যে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ক্ষমতার ভিসা নিয়ে এসেছে। ফলে একদিন যে তারা ক্ষমতার রাজ্য থেকে নির্বাসিত হতে পারে এটা ভাবতেই চায় না। যাহোক আমার মনে হল ইতিহাসের ব্যাপারে নিজের কিছু চিন্তা ভাবনা এখানে শেয়ার করাই যায়। আমরা তো শুধু সিরাজউদ্দৌলার কথাই ইতিহাস থেকে জানতে পারিনি, মীর জাফরের কথাও সেখান থেকেই জানতে পেরেছি। তাহলে এখনই বা কেন আমরা মুক্তিযুদ্ধে ও পরবর্তী সময়ে কার কি ভূমিকা ছিল সেটা লিখি না। কেন মুক্তিযুদ্ধের লাখ লাখ শহীদের পাশাপাশি রাজাকার আল বদরদের বর্বরতার কথা লিখি না। নূর হোসেনদের বীরত্বের পাশাপাশি এরশাদের নিষ্ঠুরতার কথা, শাহবাগের কথা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জনবিরোধী কাজের কথা, রগ কাটার কথা, ২০০২ সাল সহ বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় ও মতাদর্শগত সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের কথা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে শত শত মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড, চব্বিশের আন্দোলনে শহীদদের পাশাপাশি মব জাস্টিসের কথা, হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ক্রসফায়ার, শত শত দন্ড প্রাপ্ত অপরাধীদের মুক্তির কথা, কোটি কোটি টাকা পাচারের পাশাপাশি কোটি কোটি টাকা কর মওকুফ করার কথা কেন লিখি না। আবার একই সাথে এসব শাসকদের সফলতার কথাই বা কেন লিখি না? মুজিব, জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হাসিনা - এদের সবার শুধু ব্যর্থতাই ছিল না, সাফল্যও ছিল। সত্যের শুরুটা একদিন করতেই হবে। হোক না সেটা এখন থেকেই শুরু।

মস্কোর পথে, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

পরিমল

প্রশ্ন