গল্প
নব্বুইয়ের দশকে আমি যখন দুবনায় জয়েন করি সেখানে অনেকের সাথেই পরিচয় হয়। এদের একজন ছিলেন গিওরগি নিকোলায়েভিচ আফানাসিয়েভ। আমার মত ওনার ফ্যামিলিও মস্কো থাকত। আমরা তাই প্রতি শুক্রবার এক সাথে মস্কো ফিরতাম। একদিন গল্পচ্ছলে তিনি বললেন
আসল কথা লোকজনকে বেশি খারাপের ভয় দেখিয়ে ততটা খারাপ না করা। তাহলে অনেক অপ্রিয় খাবারও অন্যদের গেলানো যায়, খারাপ কাজ করেও পার পাওয়া যায়।
যেমন?
এক গল্প বলি। এক মেয়ের সাথে আফ্রিকান এক ছেলের প্রেম। এমনকি বিয়ের চিন্তা করছিল তারা। তারপর হঠাৎ সম্পর্কে ছেঁদ। সেই ছেলে দেশে চলে যায়। মেয়ে স্থানীয় এক ছেলের সাথে প্রেম শুরু করে। বিয়ে হয়। কিছুদিন পরে মেয়েটি বুঝতে পারে সে সন্তান সম্ভবা। কিন্তু সে নিশ্চিত নয় সন্তানটি কার – তার আগের প্রেমিকের নাকি নতুন বরের। সে তো মহা সমস্যায় পড়ে গেল। কারণ বর্তমান বর তার আগের সম্পর্কের কথা জানত না। সে ভয় পেল, যদি সন্তান কালো হয় তাহলে স্বামী তাকে ত্যাগ করবে। তার মাথা খারাপ হবার অবস্থা। তারপর?
একদিন সে ঘুম থেকে উঠে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল। স্বামী তাকে জিজ্ঞেস করল
– কি হয়েছে? এতো কাঁদছ কেন?
- আমি প্রচণ্ড এক দুঃস্বপ্ন দেখেছি।
- কি স্বপ্ন?
- দেখেছি যে আমাদের সন্তান কুচকুচে কালো আর তার দুটো মাথা।
- কি যে বল। তা কখনও হয়? এসব বাজে ভাবনা বাদ দিয়ে শান্ত হও।
তারপর?
কিছুদিন পরে মেয়েটি সন্তান প্রসব করল। ছেলেটি গেল হাসপাতালে মা আর সন্তানকে দেখতে। সিস্টারকে জিজ্ঞেস করল
- কে জন্ম নিয়েছে? ছেলে না মেয়ে?
- মেয়ে।
- গায়ের রঙ কেমন?
- কুচকুচে কালো।
- মাথা কয়টা?
সিস্টার ওর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে জানালো
- একটা।
- বাঁচা গেল।
ছেলেটি দুই মাথাওয়ালা সন্তান হতে পারে এই ভাবনায় এতটাই বিহ্বল ছিল যে গায়ের রঙ নিয়ে তার কোন সমস্যাই ছিল না।
আমাদের দেশের প্রগতিশীলদের অবস্থা দেখে আজ এই গল্পটিই মনে পড়ে গেল। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাপক ভাবে অংশ নেবার পরেও ক্ষমতার ভাগ বাটয়ারায় সাইড লাইনেই রয়ে গেল তারা। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পরেও নিজেদের অবস্থান আরও দুর্বল হল। চব্বিশের আন্দোলনে স্বৈরাচার হটালেও বৈষম্য দূর হল না, বরং মৌলবাদী শক্তি পাতাকা খামচে ধরল। সাদা ফুটফুটে সন্তানের পরিবর্তে জন্ম নিল কালো, দুই মাথাওয়ালা সন্তান। সেই মেয়েটি পরিস্থিতি বুঝে আগে থেকেই সঠিক বয়ান তৈরি করেছিল। আমাদের বিজ্ঞজনেরা বরাবরের মত এবারও পরিস্থিতি বুঝতে ভুল করেছেন।
দুবনা, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
আসল কথা লোকজনকে বেশি খারাপের ভয় দেখিয়ে ততটা খারাপ না করা। তাহলে অনেক অপ্রিয় খাবারও অন্যদের গেলানো যায়, খারাপ কাজ করেও পার পাওয়া যায়।
যেমন?
এক গল্প বলি। এক মেয়ের সাথে আফ্রিকান এক ছেলের প্রেম। এমনকি বিয়ের চিন্তা করছিল তারা। তারপর হঠাৎ সম্পর্কে ছেঁদ। সেই ছেলে দেশে চলে যায়। মেয়ে স্থানীয় এক ছেলের সাথে প্রেম শুরু করে। বিয়ে হয়। কিছুদিন পরে মেয়েটি বুঝতে পারে সে সন্তান সম্ভবা। কিন্তু সে নিশ্চিত নয় সন্তানটি কার – তার আগের প্রেমিকের নাকি নতুন বরের। সে তো মহা সমস্যায় পড়ে গেল। কারণ বর্তমান বর তার আগের সম্পর্কের কথা জানত না। সে ভয় পেল, যদি সন্তান কালো হয় তাহলে স্বামী তাকে ত্যাগ করবে। তার মাথা খারাপ হবার অবস্থা। তারপর?
একদিন সে ঘুম থেকে উঠে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল। স্বামী তাকে জিজ্ঞেস করল
– কি হয়েছে? এতো কাঁদছ কেন?
- আমি প্রচণ্ড এক দুঃস্বপ্ন দেখেছি।
- কি স্বপ্ন?
- দেখেছি যে আমাদের সন্তান কুচকুচে কালো আর তার দুটো মাথা।
- কি যে বল। তা কখনও হয়? এসব বাজে ভাবনা বাদ দিয়ে শান্ত হও।
তারপর?
কিছুদিন পরে মেয়েটি সন্তান প্রসব করল। ছেলেটি গেল হাসপাতালে মা আর সন্তানকে দেখতে। সিস্টারকে জিজ্ঞেস করল
- কে জন্ম নিয়েছে? ছেলে না মেয়ে?
- মেয়ে।
- গায়ের রঙ কেমন?
- কুচকুচে কালো।
- মাথা কয়টা?
সিস্টার ওর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে জানালো
- একটা।
- বাঁচা গেল।
ছেলেটি দুই মাথাওয়ালা সন্তান হতে পারে এই ভাবনায় এতটাই বিহ্বল ছিল যে গায়ের রঙ নিয়ে তার কোন সমস্যাই ছিল না।
আমাদের দেশের প্রগতিশীলদের অবস্থা দেখে আজ এই গল্পটিই মনে পড়ে গেল। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাপক ভাবে অংশ নেবার পরেও ক্ষমতার ভাগ বাটয়ারায় সাইড লাইনেই রয়ে গেল তারা। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পরেও নিজেদের অবস্থান আরও দুর্বল হল। চব্বিশের আন্দোলনে স্বৈরাচার হটালেও বৈষম্য দূর হল না, বরং মৌলবাদী শক্তি পাতাকা খামচে ধরল। সাদা ফুটফুটে সন্তানের পরিবর্তে জন্ম নিল কালো, দুই মাথাওয়ালা সন্তান। সেই মেয়েটি পরিস্থিতি বুঝে আগে থেকেই সঠিক বয়ান তৈরি করেছিল। আমাদের বিজ্ঞজনেরা বরাবরের মত এবারও পরিস্থিতি বুঝতে ভুল করেছেন।
দুবনা, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
Comments
Post a Comment