কুকুর ও মানুষ

গতকাল যখন সোফায় বসে ডাকের অপেক্ষা করছি, পাশে এক ভদ্রলোক বসে জিজ্ঞেস করলেন

আপনি ভারতীয়?
আমি বাংলাদেশ থেকে।
আচ্ছা। আসলে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান - আপনাদের সবাইকে দেখতে এক রকম লাগে তো তাই ভাবলাম ভারতীয়।
আমারও এরকম হয়। রাশিয়ার তো বটেই, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন রিপাবলিকের লোকদের প্রথমে ঠিক চিনে উঠতে পারি না কে কোন জাতির যেমন পারিনা ইউরোপের বা আফ্রিকার মানুষদের দেশ হিসেবে ঠিক ঠিক চিনতে।

অনেকক্ষণ কথাবার্তা হল, মানে মিনিট পনেরো, যতক্ষণ ডাকের অপেক্ষায় বসে ছিলাম। ভদ্রলোক কুবান এলাকার, অনেক দিন কাটিয়েছেন সাইবেরিয়ায়, এখন দ্মিত্রভের পাশে এক গ্রামে থাকেন, সেখানে আঙ্গুর ফলান নিজের দাচায়। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য দুবনায় এসেছেন।

আমি সময় পেলেই ভোলগার তীরে হাঁটি। গ্রীষ্মে এখানে অসখ্য মানুষ কুকুর নিয়ে হাঁটতে যায়। কত রকমের যে কুকুর। কে যেন বলেছিল এক বিকেলে ও চল্লিশ জাতির কুকুর দেখেছে। আমি নিজেও কখনও কখনও কুকুর নিয়ে ঘুরতে যাই। অন্য কুকুরদের দেখলে আমাদের কুকুরেরা হাই হ্যালো করে, কখনও চুমু দেয়, কালেভদ্রে ঘেউ ঘেউ করে। কখনোই মনে হয়নি কুকুররা একে অন্যকে জিজ্ঞেস করে ও চিহুয়াহুয়া নাকি আইরিশ সেট্টার নাই অন্য কেউ। কোনদিন ওদের জিজ্ঞেস করতে শুনিনি "তুমি হিন্দু না মুসলমান", খাবারেও কোন বাছবিচার করতে দেখিনি।

গতকাল ভদ্রলোকের কথা শুনে মনে হল পৃথিবীর তাবৎ প্রাণী যেখানে দেশ, জাতি, ধর্ম এসব ছাড়া দিব্যি বেঁচে আছে, সুখে আছে - আমরা মানুষেরা কেন পারি না। আমরা নিজদের সৃষ্টির সেরা জীব ভাবি, কিন্তু আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব তো শুধুই বিভেদের মধ্যে।

দুবনা, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

প্রশ্ন

পরিমল