কুলাঙ্গার

কথায় বলে «যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ।» এই কথাটি হয়তো ক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য অর্থাৎ লঙ্কায় গেলেই হবে না ক্ষমতা দখল করতে হবে। ফলে দেশের প্রায় সবাই মিলে স্বৈরাচারের পতন ঘটালেও সবাই রাবণ হতে পারেনি, হয়েছে হাতে গণা কয়েকজন। তাও আবার বিভিন্ন পদ ও পদবীর।

আরো একটা কথা আছে যে «ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।» সবার ক্ষেত্রে এই কথা প্রযোজ্য কিনা সেটা বলতে পারব না তবে আমাদের বুদ্ধির ঢেঁকিরা যে সেটা করে তাতে সন্দেহ নেই। তারা ইউরোপ, আমেরিকায় যাক বা অন্য যে কোন দেশেই যাক - বাঙালির জাতীয় খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। বিদেশে শিক্ষা লাভ করলেও চেহারা চরিত্রে তারা বাঙালিই থেকে যায়। বিদেশী শিক্ষা শুধু ডিগ্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সেটা তারা দেশে প্রয়োগ করে সার্টিফিকেট হিসেবে যা তাদের দেশের মানুষের চোখে প্রায় দেবতুল্য করে তোলে। কিন্তু দেশের মানুষের প্রতি তাদের আচরণ রক্ষণশীল বাঙালি জাতীয় ও ধর্মীয় সত্ত্বাকে অতিক্রম করতে পারে না। বিশেষ করে যদি প্রতিহিংসার কথা আসে। এসব খুব বেশি করে দেখা যায় তাদের মধ্যে যারা বাইরে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে লিপ্ত থাকে আর দেশীয় পত্রপত্রিকায় ওয়াজ করে নিজেদের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। আর যদি কোন ভাবে ক্ষমতার ঝোলা গুড়ে কিছুটা হলেও কামড় বসাতে পারে তাহলে পশ্চিমা শিক্ষা দীক্ষা ভুলে এরা মেতে ওঠে মধ্যযুগীয় ব্যবস্থায় ফিরে যেতে।

আলী রিয়াজ সংবিধান পরিবর্তনের খসড়া পেশ করেছেন। একেবারে শুরুতেই তিনি বলেছিলেন সংবিধানের খোলনলচে বদলে দেবার কথা। এই অর্থে তিনি প্রথম থেকেই পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছিল তিনি সেকুল্যার ভিশনের মানুষ। কিন্তু তার ভিশন যে এত ভীষণ সেটা কি জাতি জানত? তিনি শেখ হাসিনাকে দুই চক্ষে দেখতে পারতেন না, যেমন শেখ হাসিনা দুই চক্ষে দেখতে পারতেন না প্রেসিডেন্ট জিয়াকে। এর পরেও শেখ হাসিনা জিয়ার আদেশ পালন করেছেন দেশে রাজনীতিকে কঠিন করে দিয়ে। শেখ হাসিনা আদালতের রায় থাকার পরেও বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাননি ভোটের যোগ বিয়োগে। আলী রিয়াজ সেটা করার চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি শেখ হাসিনাকেই অনুসরণ করলেন। মৌলবাদীদের খুশি করতে গিয়ে তিনি সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বিলোপ করার প্রস্তাব আনলেন। এই না হলে সেক্যুলারিজমে বিশ্বাসী মানুষ। তিনি জাসদের কর্মী ছিলেন। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের সেনারাই যে সমাজতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু এটা তখনই জানতাম, তাই সমাজতন্ত্র উঠিয়ে দেবার জন্য তার সুপারিশে অবাক হইনি। পাকিস্তান ভেঙেছিল জাতীয়তাবাদের জলোচ্ছ্বাসে। তাই যে জাতীয়তাবাদ বিদায় নেবে তাতে কি সন্দেহ আছে। গণতন্ত্রও হয়তো বিদায় নিত, কিন্তু বেচারা আমেরিকা নিবাসী। নুনের জন্য হলেও তো গুন গাইতেই হবে। এক কথায় ভদ্রলোক দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী সমাজের কুলাঙ্গার।

দুবনা, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

পরিমল

প্রশ্ন