ভোগবাদ

কয়েকদিন আগে এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার (খুব সম্ভব) দমিত্রি কুলিকভ এক টক শোতে বললেন,"যখন থেকে মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনকে পার্টি তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে সেদিন থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের শুরু। আর সেটা ঘটেছে গত শতাব্দীর ষাটের দশকে।" কথাটা কিছুটা অবান্তর মনে হলেও একেবারে মিথ্যা নয়। মানুষের লক্ষ্য যদি মহৎ কোন আদর্শ না হয়ে একান্তই নিজের ইন্দ্রিয় সুখ হয় সে তখন খুব বড় কিছু করতে পারে না। ডাক্তারি ডিগ্রি অর্জন আর সত্যিকার ডাক্তার হওয়া এক নয়। বিপ্লবের এবং যুদ্ধের পরে মানুষ সমাজের জন্য কাজ করত আর একারণেই তখন অনেক প্রতিকূলতার পরেও সব দিকে এগেইয়ে গেছে, জিতেছে বিশ্ব যুদ্ধে, জয় করেছে মহাকাশ। কিন্তু ষাটের দশক থেকে সে একান্তই নিজের জন্য বাস করতে শুরু করে। ফলে সামাজিক উন্নয়নের চেয়ে ব্যক্তিগত লাভ লোকসান বড় হয়। এর হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ে দুর্নীতি, কালোবাজারী ইত্যাদি। বাংলাদেশের দিকে তাকালেও একই ঘটনা দেখতে পাই। যতদিন পর্যন্ত দেশ পরাধীন ছিল তখন স্বাধীনতা মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকত, সে ব্যক্তিগত লাভ লোকসানের হিসেব না করে দেশকে মুক্ত করতে নেমেছিল। কিন্তু যখনই ব্যক্তিগত ভালো থাকা সামনে চলে এসেছে তখন সে এই স্বাধীন দেশ থেকে নির্দ্বিধায় চলে যাচ্ছে বিদেশে। এর পেছনে সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি অনেক কারনই আছে। কিন্তু দিনের শেষে ব্যক্তিগত ভালোমন্দই সামনে চলে আসে। কোণ আদর্শ তাকে ধরে রাখে না। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করাও ঠিক এই সূত্র ধরেই হয়।

যেকোন ব্যর্থতা সমষ্টিগত ভাবে মোকাবেলা করা যত সহজ একক ভাবে ততটা সহজ নয়। এ থেকেই জন্ম নেয় হতাশা, অবিশ্বাস। যখন আশির দশকে পেরেস্ত্রইকার দমকা হাওয়ায় সব উড়িয়ে নিয়ে যেতে শুরু করল, মানুষ আর দেশের কথা ভাবল না, ফলে যখন চোখের সামনে দেশটা নাই হয়ে গেলেও কেউ তার প্রতিবাদ করলো না। পেরেস্ত্রইকা এই ভাঙ্গনকে গতি দিয়েছিল, তবে ভাঙ্গনের বীজ বপন করা হয়েছিল অনেক অনেক আগে।

দুবনা, ০১ জুন ২০২৩

 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা