সমস্যা

কয়েক দিন হল ফেসবুকে ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি নিয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগসহ বিভিন্ন সমস্যায় সরকারের নির্লিপ্তার অভিযোগ এসেছে এই চিঠিতে।‌ তবে ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্ট দেখে মনে হল আমেরিকা প্রবাসী হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এটা করা হয়নি। এমনকি বৌদ্ধ কমিউনিটির পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে শতাধিক বুদ্ধিজীবীও এই চিঠির বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন। যেহেতু আমেরিকায় অর্থের বিনিময়ে সিনেটর বা কংগ্রেসম্যানদের দ্বারা এসব বক্তব্য দেয়ানো যায় তাই ধারণা করা হচ্ছে বিরোধী দল অর্থের বিনিময়ে এসব করিয়েছে আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য। এসব দেখে নিজের মনেই কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হল।

আমেরিকা একটা গণতান্ত্রিক দেশ বলেই পরিচিত। তাহলে সেই দেশের জনপ্রতিনিধিরা কিভাবে অর্থের বিনিময়ে অন্য দেশের রাজনীতিতে এভাবে হস্তক্ষেপ করে? এমনকি তারা যদি সত্যি সত্যিই আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে চিন্তিত হন, অনেক ক্ষেত্রেই এটা শুধু অর্থের জন্য হতে পারে। তাই এই চর্চা গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয় - সেটা না আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য না বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশের জন্য। আফগানিস্তান, ইরাক কত প্রমাণ আর দিতে হবে?

যদি আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল এসব করে তাহলে সেসব দল কি আদৌ দেশপ্রেমিক থাকে? তারা কি খাল কেটে কুমির আনছে না? যদি কোন কারণে বাইরের হস্তক্ষেপ দরকার হয় সেক্ষেত্রে জাতিসংঘ (যদিও এখন জাতিসংঘের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ), বিভিন্ন আঞ্চলিক ফোরাম বা বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাবশালী একাধিক দেশের কাছে আবেদন ভালো নয়?

এটা ঠিক যে যদি বিরোধী দল এটা করে থাকে তাহলে সে সংখ্যালঘু বা হিন্দু সমস্যা নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করছে, সমস্যার সমাধানের জন্য নয়। তার মানে এই নয় যে দেশে এ সমস্যা একেবারেই নেই। দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যেমন জানাতে হবে, এসব বিষয় নিয়ে যাতে কেউ আন্তর্জাতিক মহলে না যেতে পারে সেজন্য এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের উপরেও চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ সমস্যা যে আছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, রাজনৈতিক আদর্শ, কর্পোরেট স্বার্থ - এসব মাথায় রেখে শিক্ষিত মানুষ বা সমাজ যখন সত্যকে অস্বীকার করে তখন তাদের শিক্ষা শিক্ষা থাকে না, অপশিক্ষা হয়। মিথ্যা দিয়ে আর যাই হোক দেশ বা সমাজের মান বাড়ানো যায় না, বরং সত্যকে অস্বীকার করার মাধ্যমে দেশের সম্মান ভূলুন্ঠিত করা হয়। সত্যিকারের শিক্ষিত ও মুক্তমনা মানুষ অপ্রিয় সত্যকে স্বীকার করে নিজের ভুল সংশোধন করে। এটাই বিজ্ঞানমনস্কতা। এটাই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে পারে।

মস্কো, ১৯ জুন ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা