হারজিত

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হয়েছে। জয়ের একটা বড় দোষ হল সেক্ষেত্রে মানুষ জয়টাই দেখে, কিভাবে জিতল সেটা মাথায় রাখে না। অনেক সময় জয়ের মধ্যেও যে পরাজয় লুকিয়ে থাকে সেটা হিসেবে রাখে না।

নথিভুক্ত আদর্শের দিক থেকে না হলেও ক্ষমতায় টিকে থাকা বা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেবার কৌশলে আর দেশ পরিচালনায় দেশের সব প্রধান প্রধান দলই আজ ধর্মকে ব্যবহার করছে। তাই কোন দলের প্রার্থী জয়ী হল, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিশ্বাসী মানুষের কাছে সেটা হয়তো স্বল্পকালীন বিবেচনায় খুব একটা গুরুত্ব রাখে না, তবে দীর্ঘ মেয়াদী বিবেচনায় এই ফলাফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা এক ধরণের অশনি সংকেত।

বর্তমানে ভোটের যে মেরুকরণ তাতে প্রতিটি ভোট হারানো মানে একাত্তরের চেতনার ভিত্তি আরও নড়ে ওঠা। এতদিন পর্যন্ত সাধারণ ধারণা ছিল যে বিশেষ করে মৌলবাদীদের পক্ষে জন সমর্থন ৫-১০% বেশি নয়। এখন মনে হয় সেটা ২৫% এসে দাঁড়িয়েছে। অন্তত খুলনার ফলাফল সেই ইঙ্গিত করে বলে অনেকেই লিখছেন।

যেকোনো ধরণের প্রগতির প্রধান সঙ্গী স্বচ্ছতা। কিন্তু বিগত অনেক দিন সরকার সেটা দিতে পারছে না, বিশেষ করে নির্বাচনের ক্ষেত্রে। একটা কথা আছে - "উনি মরিয়া প্রমাণ করিলেন যে উনি সত্যি সত্যিই মারা গেছেন।" বর্তমানে ভোট প্রশ্নে সরকার কি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কাছে, কী সাধারণ মানুষের কাছে, কী বিদেশী পর্যবেক্ষকদের কাছে এতটাই আস্থা হারিয়েছে যে তাকে মনে হয় "হারিয়া প্রমাণ করিতে হইবে যে সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করিতে সক্ষম।" আর পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি সরকার নিজেও দায়ী। আসলে এটাই আমাদের রাজনৈতিক কালচার। আমরা একদিকে সরকারের সব কাজেই বিরোধিতা করতে অভ্যস্ত, অন্যদিকে কোন সরকার কখনই আন্তরিক ভাবে বিরোধী দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছতে আগ্রহী নয়।

খেলে জেতা নয় মাঠ দখল করাই আমাদের রাজনৈতিক ফুটবলের অন্যতম লক্ষ্য। ফলে দিন দিন দেশ থেকে রাজনীতি পালাচ্ছে আর তার জায়গা দখল করছে ধর্মীয় সংগঠনগুলো।

দুবনা, ১৩ জুন ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা