ইতিহাস

গতকাল ছিল ২২ জুন, বছরের সবচেয়ে বড় দিন। তবে এই দিনটি রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ট্র্যাজিক দিন। ১৯৪১ সালের ২২ জুন ভোর ৪.০০ টায় হিটলারের জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে। যেহেতু ইউরোপের বাঘা বাঘা সব দেশ বলতে গেলে প্রায় বিনা যুদ্ধে জার্মানির বশ্যতা মেনে নিয়েছিল তাই ভাবা হয়েছিল যুদ্ধ বেশিদিন টিকবে না। তবে ব্রেস্ত দুর্গে প্রথমেই তারা বাধার সম্মুখীন হয়, অসম এই যুদ্ধে সেখানকার সেনারা এক মাস প্রতিরোধ করে। এরপর যদিও জার্মান বাহিনী ধীরে ধীরে প্রায় মস্কোর উপকণ্ঠে এসে পৌঁছে, তবে সব জায়গায়ই তাদের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আসতে হয়েছে - কোথাও কোন ওয়াক ওভার ছিল না। ১৪১৮ দিন ব্যাপী এই যুদ্ধ শেষ হয় ০৯ মে ১৯৪৫ সালে বার্লিনে। যুদ্ধে মারা যায় প্রায় ২৭ মিলিয়ন বা ২.৭ কোটি সোভিয়েত মানুষ। এরপর থেকে প্রতি বছরই এরা এই দিনটি স্মরণ করে। বিভিন্ন জায়গার ১৪১৮ টি মোমবাতি জ্বালায়। ২২ জুনকে এরা বলে শোক ও স্মরণ করার দিন।

অনেক আগে বাচ্চারা যখন ছোট ছিল আর সবাই একসাথে থাকতাম, সন্ধ্যা ছয়টায় যখন টিভি থেকে ঘোষণা করা হত এক মিনিট নীরবতা পালনের কথা - আমরা সবাই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাতাম বীর শহীদদের। এখন বাসায় থাকলে নিজেরাই সেটা করি। যখন ইউরোপ তথা সভ্য দুনিয়া নতুন করে ফ্যাসিবাদকে লালন করছে, ইউক্রেন ও বাল্টিকের দেশগুলোয় হিটলারের দোসররা যখন মার্চ করে ঘুরে বেড়ায় - তাদের সরকারি ভাবে সম্মান জানাচ্ছে - সময় এসেছে নতুন করে ইতিহাসের দিকে তাকানোর। না পশ্চিমা ইতিহাস নয়, যেখানে ২৭ মিলিয়ন সোভিয়েত মানুষের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়ে রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদানকে অস্বীকার করা হয়। সময় এসেছে সত্যি ইতিহাস জানার। কারণ মিথ্যার উপর কোন কিছু খুব বেশি দিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সেটা আজ ইউরোপের সাধারণ মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ইতিহাস থেকে পালিয়ে বেড়িয়ে কিছু দিন ভালো থাকা যায়, বালিতে মুখ গুঁজে ঝড়ের তাণ্ডব নৃত্য থেকে দৃষ্টি এড়ানো যায় - কিন্তু তাতে ঝড় থামে না।

দুবনা, ২৩ জুন ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা