কাজ

সাধারণ মানুষ সাধারণত সমাজের অসাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। তাই সুযোগ পেলেই ভাই, দাদা, মামা এসব বলে ডেকে তাদের সাথে নিজের নৈকট্য প্রকাশ করে আত্মতুষ্টি লাভ করে। তাদের চোখে এই অসাধারণ লোকেরা হতে পারেন রাজা উজির, নেতা বা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত কেউ। সাধারণ মানুষ নিজেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ হলেও নিজেদের তা ভাবে না বা বলা চলে নিজেদের পরিচয় নিয়ে কুন্ঠাবোধ করে। যদিও একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, বিজ্ঞানী, নেতা - এরা নিজেদের অসাধারণ মনে করেন এদের মধ্যে খুব কম জনই কোন সাধারণ মানুষের মত রিক্সা চালাতে পারেন, ফসল লাগাতে বা অন্য কোন কায়িক পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন।‌ তবে আমাদের সমাজে মানুষের অবস্থান নির্নয় করা হয় তার পদ দিয়ে, কি করছে সেটা দিয়ে, কেমন করছে সেটা দিয়ে নয়। তাই একজন নিজের পেশায় কুশলী হয়েও শুধুমাত্র পেশার কারণে সমাজে অবহেলিত থেকে যায়। অন্যদিকে আমাদের অসাধারণ লোকেরা সাধারণ মানুষের সাথে আত্মীয়তা সাধারণত স্বীকার করতে চায় না। হ্যান্ডশেক এড়াতে না পারলে প্রথম সুযোগেই হাত ধুতে ভুল করে না। তবে রাজনৈতিক নেতারা যদি ভোটের সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাধারণের মাঝে দর্শন দেয়, অন্যেরা সেসব ধার ধারে না। কাজের এই অসাম্য মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বাড়ায়। হিন্দু সমাজের বর্ণভেদ যে কাজের এই শ্রেণী বৈষম্যের জন্য দায়ী। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে কাজের এই শ্রেণী ভেদ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও সমান ভাবে প্রথিত। যতদিন না আমরা কাজকে শ্রেণিহীন করতে পারব, সমস্ত রকমের কাজকে সমান ভাবে শ্রদ্ধা করতে শিখব ততদিন পর্যন্ত সামাজিক সাম্য আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে।

দুবনা, ২৫ জুন ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা