বিজয় দিবস

পশ্চিমা বিশ্বে এবং রাশিয়ায় যারা পশ্চিমা বিশ্বের বর্তমান দর্শনে বিশ্বাসী - তারা বলে কী দরকার এত জাঁকজমক করে বিজয় দিবস পালন করার? সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর বেশ কিছুদিন কোন জাঁকজমক ছিল না। ১৯৯৫ সালে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ইয়েলৎসিন আবার বিজয় প্যারেড করতে গেলে পশ্চিমা বিশ্বের অনেকেই এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে, যদিও শেষ পর্যন্ত বিজয় পার্কে জাঁকজমক করে বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপিত হয়। সেই ১৯৯১ সাল থেকেই শুরু হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা খর্ব করে দেখানোর প্রচেষ্টা। এমনকি কেউ কেউ হিটলার এবং স্তালিন আর সেই সাথে জার্মানি আর সোভিয়েত ইউনিয়নকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর জন্য দায়ী করার প্রয়াস দেখিয়েছে। আর এ জন্যেই দরকার ইতিহাস বিকৃত করতে না দেয়া। ইতিহাসকে যেমন অতিরঞ্জিত করে দেখানোর দরকার নেই তেমনি তাকে অস্বীকার করারও দরকার নেই। আজ বাংলাদেশে আমরা যা দেখছি সেটা বিভিন্ন ভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করার ফল।

কী সোভিয়েত ইউনিয়নে, কী রাশিয়ায় - একটি বিষয় খেয়াল করেছি - যুদ্ধে জয়ে যতটা না কোন নেতা বা সেনাপতির প্রশংসা করা হয় তারচেয়ে বেশি প্রশংসা করা হয় সাধারণ সেনাদের, সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার জনগণের। সবাইকে বুঝতে দেয়া হয়, জার, কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি, সেনাপতি যেই হোক না কেন, বিজয়ের মূল নায়ক দেশের জনগণ, যুদ্ধক্ষেত্রে ও সরবরাহ কেন্দ্রে দেশের মানুষের একাত্মতা, তাদের ঐক্যবদ্ধ কাজ। সব কিছু যুদ্ধের জন্য, সব কিছু বিজয়ের জন্য। আমাদের দরকার সবার জন্য একটি বিজয়। এই বিজয় অর্জনে আমরা কোন মূল্য দিতে পিছপা হব না।

আজকের প্রজন্ম যদি তাদের অতীত নিতে গর্বিত না হতে পারে, যদি ইতিহাস বিকৃত করার মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে অতীতের জন্য লজ্জাবোধ জাগানো হয় তবে সে প্রজন্ম কখনই তার অতীতের জন্য, তার ইতিহাসের জন্য লড়াই করতে পারে না। তাই বর্তমান প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যা বা বিকৃত ইতিহাস দিয়ে ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ অর্জন করা যত সহজ সত্য দিয়ে ততটা সহজ নয়। তাই সত্য ইতিহাসের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।

পশ্চিমা বিশ্ব ও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে শত বাধা সত্ত্বেও সার্বিয়া ও স্লোভাকিয়ার নেতারা রেড স্কয়ারে এসেছেন। চীন, ব্রাজিল, মিশর, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনাম, বার্মা সহ প্রাক্তন সোভিয়েত রিপাবলিকের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন সেই যুদ্ধের যোদ্ধারা।

আশি বছর আগে সোভিয়েত জনগণ সহ বিভিন্ন দেশের কোটি কোটী মানুষ রক্ত দিয়ে আমাদের ফ্যাসিবাদ মুক্ত পৃথিবী উপহার দিয়েছিলেন। তবে ফ্যাসিবাদ নির্মূল হয়নি। এখনও তারা সুযোগ খুঁজছে প্রতিশোধ নেবার। আমাদের দায়িত্ব তাদের সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া।

সবাইকে ফ্যাসিবাদের বিরদ্ধে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা!

দুবনা, ০৯ মে ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

প্রশ্ন

সিপিবি কংগ্রেস

রিংকু