পূজা

 

আগে পূজা শুরু হত মহালয়া দিয়ে এখন পূজার শুরু মূর্তি ভাঙচুর উৎসবের মধ্য দিয়ে। বেশ কিছুদিন আগে মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ভাঙনের উদ্বোধন হয়েছিল এবার। গতকাল কুষ্টিয়ায় তার ধারাবাহিক সম্প্রচার দেখালো। যেহেতু আমি ঈশ্বরের ব্যাপারে আগ্রহী নই তাই ঘটনাটা এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু প্রশ্নটা ঈশ্বরকে নিয়ে নয়, প্রশ্ন মানুষকে নিয়ে, মানুষের অধিকার নিয়ে। আমি নিজে যেহেতু আমার অবিশ্বাসের অধিকার চাই ঠিক সেভাবেই যারা বিশ্বাস করে তাদের অধিকার রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হোক সেটাও চাই। তাই কোথাও যখন কোন উপাসনালয় ভাঙা হয় তখন আমি ধর্মের চেয়ে মানবতার অবমাননাটাই বড় করে দেখি, এসব ঘটনার প্রতিবাদ করি। এই পূজার মধ্য দিয়ে কোন সামাজিক ক্ষতি তো করা হচ্ছে না। যেখানে দেশে প্রচুর লোকজন ঘুষ নিয়ে, দুর্নীতি করে, ব্যাংকের ঋণ খেলাপি করে, ভোট থেকে শুরু করে হাজারো রকমের কল্পনীয় ও অকল্পনীয় জিনিসপত্র চুরি করে দিব্যি বুক উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে পূজা কী দোষ করল? তবে নিজে যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতাম, পূজা করতাম তবে আমি কিন্তু এই ভাঙা মূর্তিতেই পূজা দিতাম। কেন? যতদূর জানি এই মূর্তি শুধুই প্রতীক, বিশ্বাসীদের ঈশ্বর থাকেন তাদের হৃদয়ে, তাই মূর্তি ভাঙা না আস্ত তার উপর ঈশ্বরের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি নির্ভর করে না। তাই যেসব জায়গায় মূর্তি ভাঙা হয়েছে তারা যদি একবার ভাঙা মূর্তি সামনে রেখেই পূজা করে ভবিষ্যতে তাদের আর কেউ মূর্তি ভাঙবে কি ভাঙবে না সেই টেনশনে দিন কাটাতে হবে না। দ্বিতীয়ত যারা মূর্তি ভাঙে তারা মূর্তিতে বিশ্বাস করে না। তাহলে কেন ভাঙে? যারা বিশ্বাস করে তাদের মনে ব্যথা দেবার জন্য। কিন্তু এরা যদি মূর্তি ভাঙা না ভাঙা নিয়ে কোন রকম আগ্রহ না দেখায় তাহলে ভেঙে লাভ কি? অবশ্য মানুষ ঈর্ষা থেকেও প্রতিমা ভাঙতে পারে। সবকিছুর পরেও মূর্তি সৌন্দর্যের প্রতীক। সুন্দর করেই মানুষ তার ঈশ্বরের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। «আমাদের ঈশ্বরের কোন আকার নেই, তোমাদের থাকবে কেন?» এই ঈর্ষা থেকেও কেউ কেউ মূর্তি ভাঙতে পারে। তবে যে কারণেই ভাঙুক না কেন, যদি এ নিয়ে মন খারাপ না করে মানুষ সেই মূর্তিতেই পূজা দেয় এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। এটা হবে একটা পরিষ্কার বার্তা - জোর জুলুম করে মানুষের বিশ্বাস টলানো যায় না। এটা হবে অভিনব প্রতিবাদ। এই ভাঙা প্রতিমা সামনে রেখে পূজা করলে সেখানে মানুষের ঢল নামবে। এ নিয়ে খবর কাগজে লেখা হবে হবে, টেলিভিশনে নিউজ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা যাবে। দুর্বলতা যদি দূর করতে না পারেন সেটা ব্যবহার করে নিজেদের অবস্থার প্রতি অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। লড়াইয়ে জেতার জন্য শক্তির চেয়ে কৌশলের মূল্য কোন অংশেই কম নয়।

দুবনা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ 



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা