লোভ

নর্থ স্ট্রীম ১ ও ২ এর উপর আঘাত এসেছে। এটা যে সন্ত্রাসবাদী কাজ সে ব্যাপারে কারোই সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কে এই আঘাতের পেছনে। ওডেসায় অর্ধ শতাধিক রুশ পন্থীদের ট্রেড ইউনিয়নের বিল্ডিঙে পুড়িয়ে মেরে ইউক্রেন বলেছিল ওরা নিজেরা নিজেদের গায়ে আগুন দিয়েছে, এমনকি ওদের উদ্ধার করতে গেলে গুলি ছুঁড়েছে। কয়েক শ বছর আগে রাজপুত রমণীদের সম্পর্কে এ রকমটা বলা হলে বিশ্বাস হত। কিন্তু এখন? তারপরের পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ সেটা বিশ্বাস করেছে। বার বার দনবাসের আবাসিক এলাকায় অথবা জাপারঝিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আঘাত হেনে ইউক্রেন বলে রুশরা নিজেরা নিজেদের উপর বোমা ফেলছে। সেটাও পশ্চিমা বিশ্ব বিশ্বাস করে। অথচ কেউ প্রশ্ন করে না রাশিয়া যদি তাদের প্রতি লয়াল মানুষের উপর বোমা ফেলবে তাহলে কিয়েভ বা লভভ এসব শহরের আবাসিক এলাকায় বোমা ফেলছে না কেন? সঠিক প্রশ্ন করলে সঠিক কিন্তু অপ্রিয় সত্য বেরিয়ে আসে তাই এই প্রশ্ন কেউ করবে না। 

ইউক্রেন যুদ্ধের অনেকগুলো কারণের একটি নর্থ স্ট্রীম ২। সেটা চালু করতে দেয়নি। যুদ্ধ শুরু হবার অনেক আগেই জোসেফ বাইডেন বলেছেন আমরা কোন অবস্থাতেই ওটা চালু করতে দেব না। এরপর পশ্চিমা বিভিন্ন মাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী বিগত কিছুদিন যাবত যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে সেখানে আমেরিকার নৌ ও বিমান বাহিনীর তৎপরতা দেখা গেছে। ব্রিটেন ইউক্রেনকে সাগরে ব্যবহারযোগ্য ড্রোন দিয়েছে, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে মাত্র কয়েক দিন আগে।  জার্মানিতে যখন নর্থ স্ট্রীম ২ চালু করার অনুমতি দেবার জন্য জনমত গড়ে উঠছে তখন এই আক্রমণ। কেন? যাতে আমেরিকা তার গ্যাস বিক্রি করতে পারে ইউরোপে। কেননা এখন আর কোন পথ খোলা নেই। যেহেতু ইউরোপে গ্যাসের উচ্চমূল্যে উৎপাদন লাভজনক নয়, একের পর এক ইউরোপিয়ান, বিশেষ করে জার্মান কোম্পানি আমেরিকায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। আচ্ছা ইউরোপ যদি রিসেশনে চলে যায়, এখানে যদি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এখানকার মানুষের কি ক্রয় ক্ষমতা থাকবে? ইউরোপকে পদানত করতে গিয়ে আমেরিকা কি শুধু এ মহাদেশের শিল্প নয়, বাজারও ধ্বংস করছে না? সীমাহীন লোভের প্রেতাত্মা আজ বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
দুবনা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা