পশ্চিমা খবর মানেই সত্য খবর নয়

 গত কয়েক দিন যাবত অনেকেই ফোন করছে, অনেকেই ইনবক্সে জানতে চাইছে যুদ্ধের অবস্থা। এমন কি পুতিনের উপর আক্রমণের খবর এসেছে। এবং এসব খবরে বলা হয় অসমর্থিত, মানে যারা করে তারা ইচ্ছে করেই গুজব রটিয়ে দেয়। তাদের একটাই কাজ মানুষের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করা।


পশ্চিমা বিশ্ব যে পুতিনের মৃত্যু চায় সে ব্যাপারে কারো কোন সন্দেহ নেই। তারা সেটা করতে কখনোই দ্বিধা করবে না। তবে এসব সংবাদের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। এসব প্রচার করা হয় মানুষকে বিভ্রান্ত করতে। এটা এখন ইউক্রেন প্লাস পশ্চিমা বিশ্বের একমাত্র না হলেও প্রধান হাতিয়ার মিথ্যা প্রচার করে এদেশের মানুষের মনোবল ভেঙে দেওয়া। তাই এসব খবর শেয়ার করার আগে যাচাই করা দরকার। কারণ এরা আমাদেরকে তাদের অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। এটা অনেকটা কেউ যেচে আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড হল তারপর সেটাকে ব্যবহার করে আপনার বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল।

গতকালই এরকম এক ঘটনা শুনলাম। এখানে প্রতিদিনই ইউক্রেন নিয়ে টক শো হয়। বরিস নাদেঝদিন সেখানে নিয়মিত অংশ নেন। তিনি বরাবরই পুতিন বিরোধী, বা সঠিক ভাবে বললে পুতিনের কাজের সমালোচক। তাকে কখনই পুতিনের সমর্থক বলা চলে না। তিনি প্রথম থেকেই যুদ্ধের বিপক্ষে। কয়েকদিন আগে যখন খারকভে সংখ্যার অপ্রতুলতার কারণে রুশ সৈন্যরা পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় এ নিয়ে টক শোতে তিনি আবার বলেন যুদ্ধের বিকল্প পথ ভাবতে। কিন্তু এটাকেই ইউক্রেন আর পশ্চিমা বিশ্ব বিশাল খবর আকারে প্রচার করছে যে রুশ টিভিতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র নাদেঝদিন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে। নিশ্চয়ই রুশদের অবস্থা খুব খারাপ তাই এই আহ্বান। তারা হয়তো এটা করে এই ধারণা থেকে যে এখানে পুতিন কঠিন হাতে সব নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সেটা ভুল ধারণা। লোকজন তাদের ইচ্ছামত মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে, টিভিতেও সেই সুযোগ আছে। এখানে টিভিতে যুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষে অনেকেই কথা বলে, তবে সেটা যেন গুজব না হয় আর যারা জীবন বাজি রেখে সেখানে যুদ্ধ করছে তাদের যেন হেয় না করা হয়। আমেরিকা ইতিমধ্যেই বলেছে এমনকি যুদ্ধ শেষ হলেও আরও কয়েক বছর তারা ইউক্রেনকে সমর্থন করে যাবে, তার মানে যুদ্ধটা তাদের খুব দরকার। কেন? এটা তাদের শিল্প বিশেষ করে সামরিক অস্ত্র বিক্রির বাজার খুলে দেয়। যখন তেলের দাম কম ছিল আমেরিকার শেল গ্যাস কোম্পানিগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তাই জ্বালানি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এটা আমেরিকার পক্ষেই যাচ্ছে। এখান থেকে একমাত্র লাভবান আমেরিকা আর ইংল্যান্ড। ইউরোপের অর্থনীতি পতনমুখী। আজ একটা কাজে ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখলাম ইউরোর দাম এখন ডলারের চেয়ে কম। তাই যারা ভাবেন আমেরিকা ইউক্রেনের মানুষের জন্য, সেখানে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে, অস্ত্র দিচ্ছে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আপনাদের সমর্থন নিয়ে আমেরিকা ইউক্রেনের মানুষ মারছে, হত্যা করছে রুশদের, ধ্বংস করছে ইউরোপের অর্থনীতি। কথায় আছে সত্যি জানতে চাইলে আগে খুঁজে দেখুন কারা এখান থেকে লাভবান হচ্ছে। এখন যা হচ্ছে সেটাকে বলা যায় ইউক্রেন সেনা নিধন যজ্ঞ।

দুবনা, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ 



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা