বয়কট

ইদানিং ফেসবুকে প্রায়ই ভারত বয়কটের ডাক শোনা যাচ্ছে। ডাক দিচ্ছে সবাই। বয়কট বা এ ধরণের কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য যার বিরুদ্ধে সেটা করা হচ্ছে তার ক্ষতি করা। কিন্তু পরস্পরের উপর নির্ভরশীল এই বিশ্বে নিজের ক্ষতি না করে সেটা কতটুকু সম্ভব এটাও ভেবে দেখা দরকার। সেজন্যে আমাদের বর্তমানের বিভিন্ন ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। মাত্র তিন বছর আগেও ইউরোপ ছিল বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনীতি। তাদের ধারণা ছিল শুধু মাত্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আর ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান রেখে তারা রাশিয়াকে ধ্বংস করে দেবে। আজ তাদের অর্থনীতি কোথায়? যা তারা রাশিয়া থেকে পেত এক টাকায় তা তারা আমেরিকা থেকে কিনছে তিন টাকায়। তারপরেও রাশিয়ার পণ্য তাদের কিনতে হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। ইউরোপের কোম্পানি চলে যাচ্ছে চীন বা আমেরিকায়। তাই বলি কি বয়কট করা ভালো যদি সেটা পুষিয়ে নেবার মত শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি থাকে। নাহলে বয়কটের ফাঁদে পা ফেলে নিজেদের পস্তাতে হবে। বাংলাদেশ যদি ভারতীয় পণ্য বয়কট করে তাতে ভারতের কতটা ক্ষতি হবে আর বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেটা ভালো ভাবে ভেবে দেখতে হবে। চাই বা না চাই প্রতিবেশী তো বটেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে আমাদের চলতে হয়, হবে। হবে বিভিন্ন ধরণের দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে। তাতে কে হারবে আর কে জিতবে সেটা নির্ভর করে দেশের কুতনীতিবিদদের উপরে। আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক হল দেশের এলিটরা। দুর্নীতি, কারচুপি, মেধা পাচার, অর্থ পাচার এটা কারা করে, কাদের জন্য হয়? শাসক শ্রেণীর জন্য - তা সে রাজনৈতিক দল হোক, শিল্পপতি হোক আর বুদ্ধিজীবী হোক। আগে ঘর সামলান, তারপর অন্যদের শায়েস্তা করবেন। এ ধরণের বয়কট সাধারণ মানুষের শুধু ভোগান্তি বাড়াবে কেননা দিনের শেষে সব কিছুর মূল্য দিতে হয় তাদেরই। রুশরা বলে ইতিহাস শিক্ষক নয়, ইতিহাস ওয়ার্ডেন। ইতিহাস শিক্ষা দেয় না, তবে পড়া মুখস্থ না করলে কঠিন শাস্তি দেয়।

দুবনা, ২৮ আগস্ট ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

পরিমল

নেতা

শুভ নববর্ষ ১৪৩১