দেশ

প্রায়ই একটা প্রশ্ন অনেকের মুখেই শুনতে পাই "স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পরেও আমরা কেন পাকিস্তানের ভূত ঘাড়ে করে ঘুরে বেড়াচ্ছি?"  
আমরা পাকিস্তানের দ্বিজাতিতত্ত্বের বিপরীতে ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শে নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলাম" এটাই দেশের প্রচলিত ভাষায়। কিন্তু একটু ভেবে দেখলে? সাধারণ মানুষ, যাদের উপর যুদ্ধটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল তারা শুধুই শান্তিতে বসবাস করার জন্য যুদ্ধ করেছিল। রাজনীতির হিসাব নিকাশ তাদের ছিল না। তাদের বলা হয়েছিল তাদের সমস্ত দুর্দশার মূলে আছে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা নব্য উপনিবেশবাদীদের শোষণ। তাই শাসনটা একবার নিজের হাতে তুলে নিতে পারলেই সব দুঃখের অবসান ঘটবে। সাধারণ মানুষ সব সময়ই নেতাদের বিশ্বাস করে, তখনও করেছিল। শেখ মুজিব সহ তার ঘনিষ্ঠ কিছু সহযোগী, বামপন্থী রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে সিপিবি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন ও স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবীরা সত্যিকার অর্থেই দেশটার খোলনলচে বদলানোর জন্য লড়াই করেছিলেন। তারা সত্যি চেয়েছিলেন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে। তবে আওয়ামী লীগের মধ্য সারির নেতা কর্মীদের সিংহ ভাগ শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন চেয়েছিল নিজেদের রাজার আসনে বসানোর জন্য ঠিক যেমনটা জিন্নাহ আর নেহেরু করেছিলেন নিজ নিজ দেশে এমনকি ব্রিটিশ ভাইসরয় স্টাইলে গভর্নর জেনারেল পদ সৃষ্টি করে। ফলে স্বাধীনতার ঠিক পরেই যখন বিশেষ করে হিন্দুরা দেশের রাজনৈতিক জীবনে ধীরে ধীরে ফিরে আসতে শুরু করে তখন এদের অনেকেই প্রমাদ গণে। আর এজন্যই পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এরা নতুন মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছে। তাই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অকল্পনীয় কিছু নয়, একাত্তরেই সেই সম্ভাবনার বীজ রোপণ করা হয়েছিল। আর বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি এর সহায়ক। আমরা বা আমাদের নেতারা সেই সময়ে তাদের বিজয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলেন যে ঘরের ভেতরের এই বিপদ দেখতে পেলেও গুরুত্ব দেননি। 

দুবনা, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি