জন্মদিন

আমাদের প্রজন্মের অনেকের অফিসিয়াল আর বায়োলজিক্যাল জন্মদিন ভিন্ন। জন্মের দিন তারিখ অধিকাংশ বাবা মা সঠিক ভাবে লিখে রাখতেন না। এমনকি যাদের কুষ্ঠি ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ সেসবের তোয়াক্কা না করে সব ছাত্রদের নিজেদের খেয়াল খুশি মত জন্ম তারিখ বসিয়ে দিতেন। এ ক্ষেত্রে তারা সরকারি চাকরির বয়সটাই মাথায় রাখতেন, তারিখ বছরের যে কোন একটা দিন হলেই হল। যেহেতু এসব হত বাবা মার অনুপস্থিতিতে আর পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের এ নিয়ে তেমন কোন ধারণা ছিল না তাই ঘটনাটা ঘটে যেত অনেকটা অগোচরেই। আমি জানতাম আমার জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর। ছোট মাষ্টার মশাই যখন সেটাকে ০২ জানুয়ারি লিখলেন আমি তাঁকে সঠিক তারিখ বলার পরেও তিনি শুধু বললেন এ নিয়ে এত ভাবার কিছু নেই। হয়তোবা বাড়ি ফিরে বাবা মা'কে বললে এর একটা সুরাহা হত, তবে নিজে এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করিনি। হাই স্কুলে ভর্তি হবার সময় আবার যখন জন্মের সঠিক তারিখ বললাম সেখানে বলা হল আপাতত কিছুই করার নেই। অষ্টম শ্রেণী বা মেট্রিকুলেশনের ফর্ম ফিল আপ করার সময় সঠিক তারিখ লিখলেই হবে। পরে বুঝলাম এটা ছিল একান্তই শান্তনা। কলমের কালি একবার ডকুমেন্টে লেগে গেলে সেটা সারা জীবনের জন্য থেকে যায়। কিন্তু সরকারি জন্মদিন পালন করি বা নাই করি অফিসিয়াল কাজকর্ম ওটা ধরেই হয়।‌ তাই এ নিয়ে খেদ করে লাভ নেই। রাশিয়ায় (মনে হয় উন্নত বিশ্বের সব দেশেই) নো বার্থ সার্টিফিকেট নো ম্যান, বার্থ সার্টিফিকেট না থাকলে কোন ডকুমেন্ট পাওয়া যায় না, ফলে না পাওয়া যায় চিকিৎসা, না হওয়া যায় স্কুলে ভর্তি। সে অর্থে আমরা এক রকম বানের জলে ভেসে আসা আর এটাই আমাদের খড়কুটো। সেই অর্থে ফেসবুক বন্ধুদের অনেকের জন্মদিন আজ এই নববর্ষের দিনে। নতুন প্রজন্মের অনেকের সঠিক হলেও পুরানোদের অধিকাংশের জন্য এটা নিতান্তই সরকারি জন্মদিন। সবাইকে সরকারি জন্মদিনে বেসরকারি শুভেচ্ছা।

দুবনা, ০১ জানুয়ারি ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা