দরদ

গত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে একটা কথা চালু খুব ছিল বাজারে। যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়া নিজ দেশেও সব পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় তাহলেও পৃথিবীতে মানব জাতির অস্তিত্ব থাকবে না।‌ কথাটা এ কারণেই উঠেছিল যে তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার অর্থনীতির অবস্থা খুবই করুণ ছিল আর তাই পারমাণবিক বোমা বহনের জন্য রকেট বা প্লেনের যে জ্বালানী দরকার হয় সেটা সংগ্রহ করার অবস্থা তখন এ দেশের ছিল না বলেই ধরা হত। হিসেবে ভুল ছিল নাকি ইতিমধ্যে রাশিয়া কিছুটা হলেও যুক্তিশীল হয়ে উঠেছে যে সেই সম্ভাবনা এখন আর কেউ ধর্তব্যের মধ্যে নিচ্ছে না। কেউ এটাও ভাবছে না যে ইউক্রেন তো বটেই কন্টিনেন্টাল ইউরোপে পারমাণবিক হামলার বিরূপ প্রতিক্রিয়া রাশিয়ার উপর পড়বে। সেটাই যদি হয় তাহলে তারা কোন দুঃখে ইউক্রেনে পারমাণবিক বোমা ফেলবে। আর ফেলতে যদি হয় তাহলে তাদের অপশনগুলোই বা কী হতে পারে? অনেকের ধারণা ইউক্রেনের হাত দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে গেলে রাশিয়ার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকবে না অন্য দেশে পারামনাবিক হামলা চালানোর। কিন্তু প্রশ্ন যখন অস্তিত্বের তখন মানুষ যুক্তি খোঁজে না। তাই রাশিয়াকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে পারমাণবিক বিপর্যয় এড়ানোর কথা যারা ভাবছেন তারা ভুল করছেন। এই বিপর্যয় এড়ানোর জন্য ঠিক উল্টোটাই দরকার। কারণ রুশ জাতিটাই এমন (রাশিয়ায় বসবাসকারী সবাই তা সে এথনিক্যালি রুশ হোক আর নাই হোক) যারা পরাজয় হজম করে না, মেনে নেয় না। সেই কথা ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা আছে। তাই ইউরোপ আর আমেরিকার নিজের স্বার্থেই দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করা দরকার। আর সেটা সম্ভব কেবলমাত্র ইউক্রেনে অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ বন্ধ করে। ইউক্রেনে অস্ত্র আর অর্থ সরবরাহ করা হচ্ছে তাদের বা মানবতার প্রতি ভালবাসা থেকে নয়, বরং সাহায্যের নামে একটা জাতিকে ক্রমাগত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবার জন্য। এটা হয়েছে আফগানিস্তানে, ইরাকে, লিবিয়ায়। এটা হচ্ছে ইউক্রেনে। হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের হাত দিয়ে। আর ইউক্রেন জনগণ ধ্বংসে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বে তো নয়ই, এমনকি ইউক্রেনেও তারা কেউই এথনিক্যালি ইউক্রেনিয়ান নয়। একেই হয়তো বলে মার চেয়ে মাসির দরদ বেশি।


দুবনা, ২০ জানুয়ারি ২০২৩ 




Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা