ভাইরাস

প্রকৃতিতে বিপরীত ধর্মী বস্তুর প্রতি আকর্ষণ খুব প্রচলিত। ধনাত্মক চার্জ ঋণাত্মক চার্জকে আকর্ষণ করে, চুম্বকের উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরুকে আকর্ষণ করে, নারী পুরুষকে আকর্ষণ করে। তবে মানব সমাজে অনেক ক্ষেত্রেই উল্টো ঘটে। ভিন্নধর্মী মানুষ আকর্ষণের চেয়ে বিকর্ষণ করে বেশি বিশেষ করে যারা ধর্মে অন্ধবিশ্বাসী হয়। একই ঘটনা ঘটে রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে। তবে ইদানিং প্রায়ই দেখি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মানুষ একেবারে বিপরীত আদর্শ ব্যবহার করে। লক্ষ্য অর্জনে সমস্ত পদ্ধতিই ভালো - স্তালিনের বিখ্যাত ফর্মুলা অনুসরণে। যারা সমাজতন্ত্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে দুই চোখে দেখতে পারে না তারাই আজ সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে খারাপ দিকগুলো অনায়াসে নিজেদের দেশে আরোপ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন যেমন পশ্চিমা প্রোপাগান্ডা অপবাদ দিয়ে ওদের সংবাদ মাধ্যম এ দেশে নিষিদ্ধ করত, একই অজুহাতে পশ্চিমা বিশ্ব এখন এদের সংবাদ মাধ্যম নিষিদ্ধ করছে। ওরা বলে ভালো রুশ মানে মৃত রুশ। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় মৃত সোভিয়েত ইউনিয়নও ওদের কাছে ভালো, অনুকরণীয়। যত খারাপ তত ভালো - লেনিনের এই স্ট্র্যাটেজি অনেকেই এখন মহা উৎসাহে গ্রহণ করে। আর এই সূত্র ধরে ওরা ১১ হাজার স্যাঙ্কশন আরোপ করেছে এদের উপর। এমনকি সেটা ওদের দেশের সাধারণ মানুষের ওপর দুর্ভোগ নিয়ে এলেও। একজনকে দেখলাম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়ান প্রযুক্তি আনতে সমস্যা হচ্ছে বলে প্রচন্ড খুশি। রাশিয়ার উপর এক হাত নেয়া গেল বলে। এরা ভুলে যায় এর ফলে কষ্ট ভোগ করবে বাংলাদেশের মানুষ। এ ধরণের অন্ধ আবেগে আপ্লুত মানুষ আজ মানব জাতির জন্য সবচেয়ে বিপদজনক ভাইরাস। বিশ্বাসের ভাইরাস মারাত্মক। আরও বেশি মারাত্মক অন্ধবিশ্বাসের ভাইরাস। ভাইরাস থেকে মুক্তির একটাই উপায় - ভ্যাকসিন। আর এই ভ্যাকসিন হল শিক্ষা। ডিগ্রি নয়, শিক্ষা, প্রশ্ন করতে শেখা। ডিগ্রিধারী অশিক্ষিতদের হাত থেকে সমাজ বাঁচানো আজ যুগের দাবি। 

দুবনা, ০৮ জানুয়ারি ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা