অতিকায় অতি


আমরা যখন "মা আম আন" দিয়ে স্কুলে বাংলা শিখতে শুরু করি তখন আসলে পরিচিত এই ছবির মধ্য দিয়ে ভাষার বিশাল জগতে প্রবেশ করি। একই কথা বলা যায় অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে। পরিচিত উদাহরণ আমাদের প্রবেশ পথটা ভয়ভীতি মুক্ত করে, কিন্তু শিখি আমরা এই সব উদাহরণের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কোন পদ্ধতি, কোন নিয়ম কানুন। এই নিয়মগুলো সিনেমার ২৫ তম ফ্রেমের মত। একই ভাবে আমরা যখন কাউকে বিধর্মী, বিদেশি বা ভিন্ন মতের কোন লোককে ঘৃণা করতে শেখাই সে আসলে ঘৃণা করতে শেখে। ফলে সে শুধু উদাহরণের মানুষদের ঘৃণা করে না, ঘৃণা করে তাদের যাদের সে পছন্দ করে না। এই ঘৃণার সংস্কৃতি এক সময় সমাজের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। কারণ সে সব সমাজে মানুষ হয় সন্দেহবাতিকগ্রস্ত। প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে কি আমরা কাউকে কোন কিছু ঘৃণা করতে শেখাব না? শেখাব, তবে মানুষকে নয়, অন্যায়কে। পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করতে শেখাব। কারণ তখন আমাদের কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় সেটা শেখাতে হবে। সেটা শিখলে একজন অন্যজনের ধর্ম, বর্ণ, জাতি এসব দেখে তাকে ঘৃণা করবে না, ঘৃণা করবে তার খারাপ কাজ বা অন্যায়ের জন্য। একইভাবে চাটুকারিতা, ভক্তি বা অতিভক্তি, তৈলমর্দন এসবও সংক্রামক। যদিও মানুষ নিজের কোন লাভের জন্য হয়তোবা কারো প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়, অনেকের ক্ষেত্রে সেটা রোগ হিসেবে দেখা দেয়। সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, পাত্রে অপাত্রে তৈলমর্দন করেই যায়, করেই যায়। হয়তো এতে তাদের সমস্যা হয় না। তবে এরা যদি পাবলিক ফিগার হন আর তাদের অনেক ভক্ত থাকে, তবে অনেক সময় ভক্তকুল এসব গুরুদের কাণ্ডকারখানা দেখে লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পায় না। তাই নিন্দা বা প্রশংসা যেন অপাত্রে না হয় সেটা দেখা যেমন জরুরি তেমনি জরুরি এসব ব্যাপারে মাত্রাজ্ঞান না হারানো। জুতো কেউ চাটতেই পারে তবে তেতো স্বাদটা যেন অন্যের মুখে না না লাগে সেটা দেখাও জরুরি।

দুবনা, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ 



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা