দ্বিচারিতা

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জ্ঞানার্জন করা। জ্ঞান কী? সত্য সন্ধান। কোন কোন ধর্মে শুধু ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণের কথাই বলা হয় না, বলা হয় ঈশ্বরকে জানার কথা। আর যারা বিশ্বাসী তাদের জন্য ঈশ্বরই পরম সত্য। অন্যদিকে বিজ্ঞানের দিক থেকে দেখলে জ্ঞানার্জন হল প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটন করা, সত্যকে জানা। তাই সে অর্থে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল সত্য জানা ও অন্যদের সেটা জানানো। এমনকি বিবর্তনবাদ যদি সত্য নাও হয় সেটা এখনও কেউ প্রমাণ করেনি, যেমন কিনা প্রমাণ করেনি ধর্ম ভিত্তিক সৃষ্টির বিভিন্ন ন্যারেটিভ। তাই পাঠ্যসূচী থেকে বিবর্তনবাদ বাদ দেয়া আসলে কোন এক মতকে আগে থেকে যাচাই না করেই মেনে নেওয়া, আদালতে সাক্ষী প্রমাণ ছাড়াই কোন রায় দেয়া। বিজ্ঞান পড়েও হাজার হাজার মানুষ যেমন বিশ্বাসী থেকে যায় তেমনি বিজ্ঞান না পড়েও হাজার হাজার মানুষ অবিশ্বাসী হয়। এই বিশ্বাস আর অবিশ্বাস আসলে কিছুই নয় - কোন কিছু অন্ধভাবে মেনে নেওয়া অথবা জেকন কিছু মেনে নেবার বা না নেবার আগে প্রশ্ন করা, যাচাই করা। যেকোন মনোপলি দিনের শেষে মানের অবনতি ঘটায়। তাই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান উঠিয়ে দিলে সেটা হবে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই পঙ্গু করা। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক মতবাদ নিয়ে অনেকের প্রশ্ন আছে। আমেরিকায় অনেকেই বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করে না। সেখানে গ্যালিলিও নামে একটা জার্নাল পর্যন্ত আছে যেখানে আজও আইনস্টাইনের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণিত করার জন্য আর্টিকেল লেখা হয়। বিজ্ঞান তো আসলে ভুল প্রমাণিত হবার জন্য পথ চেয়ে বসেই আছে। বর্তমানের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণিত করে আরও সঠিক তত্ত্ব আবিষ্কার করাই তো বিজ্ঞানের অন্যতম লক্ষ্য। সেটাই যদি হয় তাহলে বিজ্ঞানকে এভাবে বাদ দেয়া কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত? দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যেসব উদ্দেশ্যের কথা বলে এ ধরণের কাজকর্ম তো সেই উদ্দেশ্যের সাথেই সাংঘর্ষিক। আপনারা সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান নিয়ে বিজ্ঞানীদের মত প্রশ্ন করেন অথচ এই আপনারাই ক্ষমতার প্রশ্নে আর ধর্মের প্রশ্নে কীভাবে লেজ গুটিয়ে অন্ধবিশ্বাসী বনে যান।

দুবনা, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

পরিমল

প্রশ্ন