সততা

দেশে বেশির ভাগ লোককেই দেখি কেমন আছে জানতে চাইলে বলে উপরওয়ালার কৃপায় ভালোই আছে। তবে অনেকেই সৎ পথে খুব একটা ভালো থাকা যায় না সে কথা শুনিয়ে দেয়। যারা খারাপ থাকার পেছনে বা বলা চলে খুব একটা ভাল না থাকার পেছনে সততাকে দোষ দেয় তাদের আমার কেন যেন সৎ বলে মনে হয় না বা বলা চলে তাদের সততা নিয়ে সন্দেহ জাগে।

আচ্ছা তাদেরকে তো কেউ জোর করে সৎ থাকতে বলছে না। যেহেতু তাদের চারিদিকে অসৎ লোকের ছড়াছড়ি তার মানে অসৎ ভাবেও থাকা যায়। অন্তত আশেপাশে যারা ভাল থাকে তাদের তারা অসৎ মনে করে। তাহলে প্রশ্ন জাগে সৎ থাকা তো তাদের নিজেদের চয়েস আর তাই যদি হয় তবে অভিযোগ কেন? যে লোক অসৎ পথে চলে এটা তার চয়েস, এ জন্যে সে অভিযোগ করে না, নিজের মনের সাথে মিলিয়ে সে সেভাবে চলে। আর যারা সৎ থাকে আর সৎ থাকার ফলে ভাল নেই বলে অভিযোগ করে তারা আসলে অসৎ - কেননা তার সততা তাকে খুশি বা সুখী করছে না। সে নিজেকে ধোঁকা দিচ্ছে। এটা অনেকটা লোক দেখানো ধর্ম পালনের মত।

এরকম দেখি প্রায় সব ক্ষেত্রেই। যেমন অনেকেই রাজনীতি বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। এবং তা তারা করে মনের টানে। তারা যৌক্তিক ভাবেই বিশ্বাস করে যে তারা মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজেদের সব কিছু বিলিয়ে দিচ্ছে। এবং হতাশার মূহুর্তে অনেকেই মানুষকে দোষ দেয় তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন না করার জন্য। 

অনেক সংসারেও তাই। স্বামী মনে করে সে সারা জীবন শুধু সংসারের জন্য করে গেল নিজের সুখ শান্তির দিকে না তাকিয়ে। একই কথা ভাবে স্ত্রী। ভাবখানা এই সংসার দুজনের নয়, সংসার একটা যুদ্ধক্ষেত্র আর সবাই তার দখল নিতে চায়। সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দেখে সেটাই মনে হয়।

এর কারণ মনে হয় নিজেকে না জানা, নিজে ঠিক কি চায় সেটা না জেনে জীবনের পথ চলা। এটা অর্থনৈতিক চাহিদা নয়, মানসিক। কেননা অনেক অর্থনৈতিক ভাবে সফল মানুষ এরকম মানসিক অশান্তিতে ভোগে। কোন কাজ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেবে তার সাথে সাথে কোন কাজ মানসিক শান্তি দেবে সেটাও ভেবে দেখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা যা করি সেটা যদি মানসিক আনন্দ না দেয় তবে সে কাজও এক ধরণের নরক যন্ত্রণা।

দুবনা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা