ছোট্ট একটা প্রশ্ন

যমুনার তীরে শ্বেত পাথরে তৈরি বিশাল তাজমহল দেখে
তাবৎ দুনিয়ার মানুষ অবাক হয়ে চেয়ে থাকে
ভাবে শাহজাহান আর মমতাজের অমর প্রেমের কাহিনী
কিন্তু প্রেম কি ছিল?
নাকি নিজের নাম চিরস্মরণীয় করে রাখার অদম্য ইচ্ছা?
অবশ্যই সম্রাট শাহজাহানের।
আচ্ছা কেউ কি ভাবে সেই সব দুর্ভাগা শ্রমিকদের কথা
যারা নিজেদের রক্ত, কান্না আর ঘাম দিয়ে 
তিলে তিলে গড়ে তুলেছিল এই ইমারত?
শুনেছি তাদের নাকি মেরে ফেলা হয়েছিল।
এসব তো গেল অতীতের কথা।
ফিরে আসি আজকের কথায়।
চারিদিকে উন্নয়নের জয়জয়কার।
উন্নয়নের রথ এগিয়ে চলছে আলোর গতিতে।
আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে উন্নয়নের কলাকুশলীদের নাম।
একদিন সব বিশেষণ শেষ হয়ে যাবে
তবুও তাদের বীরত্ব গাঁথা বলে শেষ করা যাবে না।
কিন্তু যাদের শ্রমে, যাদের ঘামে ঘুরছে উন্নয়নের চাকা
তারা কি আদৌ সুরঙ্গের ওপারে ধরতে পারবে আশার আলো?
মধ্যপ্রাচ্যের গরমে ঘেমে, ইউরোপ আমেরিকার শীতে জমে
যারা একটু একটু করে গড়ে তুলছে উন্নয়নের ভিত
তারা কি স্বপ্ন দেখতে পারছে সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের?
অথবা পোশাকের কারখানায় শ্রমজীবী নারী
যারা সারা বিশ্বকে সাজাচ্ছে নিত্যনতুন সাজে
অথচ নিজের সন্তানের মুখে
দু' বেলা ভাত তুলে দিতে
খাচ্ছে হিমশিম?
আর তাদের পরিশ্রমের অর্থে প্রাসাদ গড়ে উঠছে
ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, দুবাই কিংবা অন্য কোন দেশে।
দুর্নীতিবাজ আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী আর ধর্মীয় নেতাদের কবলে পড়ে
তার বর্তমান অসুস্থ, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। 
চারিদিকে শুধু আশ্বাস
মৃত্যুর পরে স্বর্গের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আশ্বাস।
তবে এসব তো আর এমনি হয় না।
মধ্যপ্রাচ্যে যেতে যেমন দালাল দরকার
স্বর্গে যেতেও দালাল দরকার
আর দরকার দালালির কমিশন।
জমিজমা, ভাষা, কবিগান, জারি গান, বাউলের গান
পয়লা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রা
যা কিছু তার একান্তই নিজের
তার স্বকীয়
সব সব জমা দিতে হবে
তবেই না পাওয়া যাবে অধরা স্বর্গ।
কিন্তু সেটার কি আদৌ প্রয়োজন আছে?
যে উন্নয়ন জীবিত মানুষের কোন কাজে আসে না
তার কি দরকার আছে?
শুনেছি মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ
স্বর্গের লোভ দেখিয়ে টাকা নেয়া
সেটাও কি মিথ্যা আশ্বাস নয়?
জালিয়াতি নয়?
আইন কি এখানে অসহায়?
এরকম হাজার হাজার ছোট ছোট প্রশ্ন
অবিরাম অক্লান্ত ভাবে মাথায় ঘুরপাক খায়।

মস্কো - দুবনা, ১০-১১ এপ্রিল ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা