লেনিন
আজ ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের জন্মদিন। ১৮৭০ সালে ২২ এপ্রিল ভোলগা তীরে সিমবির্স্ক শহরে তাঁর জন্ম। সমাজতন্ত্রের তত্ত্ব বাস্তবায়নের অন্যতম স্থপতি হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সোভিয়েত আমলে প্রায় সর্বত্রই দেখা যেত একটা স্লোগান
"লেনিন ছিলেন, লেনিন আছেন, লেনিন থাকবেন"
আর সারা দেশ জুড়ে ছিল লেনিনের মূর্তি। সেটা আমাকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার শিব লিঙ্গের কথা মনে করিয়ে দিত। গৌতম বুদ্ধ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে একসময় নিজেই ঈশ্বর হয়ে গেছেন। ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে লেনিন নিজেই নতুন ধর্মের জন্ম দেন। আশির দশকে অনেককেই দেখেছি লেনিনকে ঈশ্বরের মত ভক্তি করতে। সোভিয়েত ইউনিয়নে তিনি ছিলেন সমালোচনার ঊর্ধ্বে। নব্বুইয়ের দশকে শুরু হয় লেনিনের ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন দিক বিশেষ করে খারাপ দিক উন্মোচনের পালা। এখন সেটা তেমন আর হয় না বললেই চলে। তবে আগে তাঁর যেসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জিনিয়াস বলে মনে করা হত তার অনেক কিছুই আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। অনেকের ধারণা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের বীজ জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা সম্পর্কিত তাঁর কিছু সিদ্ধান্তের মধ্যেই নিহিত ছিল। বিশেহ করে বিভিন্ন প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনভাবে ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবার সাংগঠনিক অধিকারের মধ্যে, যদিও অনেক প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছিল অন্য কোন প্রজাতন্ত্রের ভূমি ও জনগণের সহজগিতায়। আজকে ইউক্রেনের সমস্যার মূলেও সেই লেনিনীয় সিদ্ধান্ত। তবে যে কারণেই হোক ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব বার বার ফিরে আসবে মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবনায়। যতদিন সমাজে অসাম্য থাকবে ততদিন থাকবে সাম্যের চাহিদা। সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ ছিল, সাম্য প্রতিষ্ঠায় পুরোপুরি সফল না হলেও বৈষম্য দূর করতে যে অনেকটাই সফল হয়েছিল সেটাও সত্য। কেউ হয়তো বলবে সেটা ছিল গরীবের সাম্য, কিন্তু কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। আমরা এখন আর রাইট ব্রাদার্সের মত করে প্লেন তৈরি করি না। কিন্তু তাঁদের সাফল্য আমাদের উৎসাহিত করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাফল্য আমাদের বলে যে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার লড়াই ইউটোপিয়া নয়। সেই সমাজ তৈরি সম্ভব। সেজন্য দরকার বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা। লেনিনের তত্ত্বকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে প্রশ্ন করা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভিন্ন উত্তর খোঁজা। আর এই অন্বেষণের মধ্যেই লেনিন থাকবেন আমাদের মাঝে। লেনিন কোন স্থবির ধারণা নয়, ধারণা পরিবর্তনের, বিশ্বকে পরিবর্তনের উদাহরণ। আমরা উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিই সেটাকে নকল করার জন্য নয়, সেটা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগুনোর জন্য।
দুবনা, ২২ এপ্রিল ২০২৩
সোভিয়েত আমলে প্রায় সর্বত্রই দেখা যেত একটা স্লোগান
"লেনিন ছিলেন, লেনিন আছেন, লেনিন থাকবেন"
আর সারা দেশ জুড়ে ছিল লেনিনের মূর্তি। সেটা আমাকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার শিব লিঙ্গের কথা মনে করিয়ে দিত। গৌতম বুদ্ধ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে একসময় নিজেই ঈশ্বর হয়ে গেছেন। ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে লেনিন নিজেই নতুন ধর্মের জন্ম দেন। আশির দশকে অনেককেই দেখেছি লেনিনকে ঈশ্বরের মত ভক্তি করতে। সোভিয়েত ইউনিয়নে তিনি ছিলেন সমালোচনার ঊর্ধ্বে। নব্বুইয়ের দশকে শুরু হয় লেনিনের ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন দিক বিশেষ করে খারাপ দিক উন্মোচনের পালা। এখন সেটা তেমন আর হয় না বললেই চলে। তবে আগে তাঁর যেসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জিনিয়াস বলে মনে করা হত তার অনেক কিছুই আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। অনেকের ধারণা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের বীজ জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা সম্পর্কিত তাঁর কিছু সিদ্ধান্তের মধ্যেই নিহিত ছিল। বিশেহ করে বিভিন্ন প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনভাবে ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবার সাংগঠনিক অধিকারের মধ্যে, যদিও অনেক প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছিল অন্য কোন প্রজাতন্ত্রের ভূমি ও জনগণের সহজগিতায়। আজকে ইউক্রেনের সমস্যার মূলেও সেই লেনিনীয় সিদ্ধান্ত। তবে যে কারণেই হোক ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব বার বার ফিরে আসবে মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবনায়। যতদিন সমাজে অসাম্য থাকবে ততদিন থাকবে সাম্যের চাহিদা। সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ ছিল, সাম্য প্রতিষ্ঠায় পুরোপুরি সফল না হলেও বৈষম্য দূর করতে যে অনেকটাই সফল হয়েছিল সেটাও সত্য। কেউ হয়তো বলবে সেটা ছিল গরীবের সাম্য, কিন্তু কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। আমরা এখন আর রাইট ব্রাদার্সের মত করে প্লেন তৈরি করি না। কিন্তু তাঁদের সাফল্য আমাদের উৎসাহিত করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাফল্য আমাদের বলে যে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার লড়াই ইউটোপিয়া নয়। সেই সমাজ তৈরি সম্ভব। সেজন্য দরকার বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা। লেনিনের তত্ত্বকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে প্রশ্ন করা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভিন্ন উত্তর খোঁজা। আর এই অন্বেষণের মধ্যেই লেনিন থাকবেন আমাদের মাঝে। লেনিন কোন স্থবির ধারণা নয়, ধারণা পরিবর্তনের, বিশ্বকে পরিবর্তনের উদাহরণ। আমরা উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিই সেটাকে নকল করার জন্য নয়, সেটা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগুনোর জন্য।
দুবনা, ২২ এপ্রিল ২০২৩
Comments
Post a Comment