রিপন
গতকাল দুপুরে অফিসে বসে একটা আর্টিকেল লিখছি হঠাৎ মেসেঞ্জারে কল এল। মঞ্জু ভাই কানাডা থেকে। ফিজিক্স আর কসমোলোজি নিয়ে কথা হল অনেকক্ষণ।
তুমি যে বছর দুই আগে কসমোলোজির উপর একটা প্রোগ্রাম করেছিলে সেই ভিডিওটা পাচ্ছি না। আছে কি তোমার কাছে?
ইউটিউবে আছে। লিঙ্ক পাঠিয়ে দেব।
আরও বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে যখন লেখায় মন দিয়েছি স্ক্রিনে একটা মেসেজ ভেসে উঠে মিলিয়ে গেল। নবীনের লেখা। দুঃখিত আর রিপন এই দুটি শব্দ চোখে পড়ল। ভেসে উঠল অন্য এক রিপনের মুখ। আর মনে করার চেষ্টা করলাম যার মুখ মনে ভাসল সে আদৌ রিপন কি না।
এরপর আবার কাজে ডুবে গেলাম। ওটা শেষ করে দেখলাম নবীনের লেখা। ভুল ভাঙল। এ আমাদের রিপন। মাত্র তিনদিন আগে ওকে নিয়ে কথা বলছিলাম মাসুদের সাথে। আমার যে দু' এক ইয়ারমেট এখনও মস্কো আছে তাদের মধ্য মাসুদের সাথে আমার নিয়মিত (মাসে - দুই মাসে একবার) যোগাযোগ আছে। মনে পড়ল রিপনের হাসি মুখ আর ডাগর আঁখি। আমরা একই বছরে সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা মস্কো আসি। ও মাদিতে ভাষা শিখে মেই থেকে মাস্টার্স করে। আমি প্যাট্রিসে। ও ছিল আমাদের শুভর বাল্য বন্ধু তাই মাঝে মাঝে প্যাট্রিসে আসত। আমি নবীন আর আরিফের ওখানে মেই গেলে ওর দেখা পেতাম। ভালো রান্না করত। অবশ্য আমার ধারণা পৃথিবীর যেকোন লোক আমার চেয়ে ভালো রান্না করে তাই রান্নার বিষয়ে আমার সার্টিফিকেট কারও জন্য প্রশংসা না দুর্নাম সেটা বলা কষ্ট। নবীনদের ওখানে তাসের আড্ডা বসত। একসাথে খেলেছি। যদিও কিছুদিন আগে শুভর পোস্ট থেকে জানতে পারি ওর অসুস্থতার কথা তবে ওর যে এত তাড়া ছিল বুঝতে পারিনি।
শাহীনকে মেসেজ পাঠালাম। ওরা মাদিতে রুমমেট ছিল। মাসুদকে কল দিতেই বলল
তুই যা বলবি আমি জানি।
রিপন মস্কোর পাট একেবারে চুকিয়ে দেয়নি। আসত শুনেছি মাঝে মাঝে। ওর বৌ এদেশেরই মেয়ে। ২০১০ এর দিকে বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ গঠন করলে ভেবেছিলাম ওর সাথে যোগাযোগ করব। হয়ে ওঠেনি। আমি সেই সোভিয়েত আমলেও প্রচুর ছবি তুলতাম কিন্তু কখনো রিপনের ছবি তুলেছি বলে মনে করতে পারলাম না। তবে আজ বুঝলাম স্মৃতির ম্যাট্রিক্সে রিপনের সেই হাসি মুখ, সেই অবাধ্য চুল আর ডাগর দুটি চোখ এখনও অম্লান।
দুবনা, ২৯ এপ্রিল ২০২৩
Comments
Post a Comment