ভেতরে বাহিরে

পশ্চিমা বিশ্ব প্রায়ই মানবাধিকারের কথা বলে আজ এই গ্রুপ, কাল ঐ গ্রুপকে প্রোমোট করে। নারী অধিকার, বিএলএম, এলজিবিটি কত গাল ভরা নাম। আবার এখন ট্র্যান্সসেক্সুয়াল কমিউনিটিকে সমর্থন দিতে গিয়ে নারীর অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। 

তবে আমার প্রশ্ন একটু অন্য জায়গায়। কেন এভাবে বিভিন্ন গ্রুপকে বার বার সামনে আনা হচ্ছে? এটা কি আসলেই এদের প্রতি সহমর্মিতা থেকে নাকি নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য? কেননা মানুষের অধিকারই যদি লক্ষ্য হয় তবে কেন সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না? যদি কেউ সে কথা বলে তাকে কেন কমিউনিস্ট আখ্যা দিয়ে একঘরে করা হয়? একটা অতি সাধারণ সত্য হচ্ছে যখন কোন একটি দল বা গোষ্ঠীকে অতিরিক্ত সুযোগ দেয়া হয় তখনই অন্যদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। আর এ থেকেই উদ্ভব যত সমস্যার। তাই সত্যিকার অর্থে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাম্যের বিকল্প নেই। সমানাধিকার বা সাম্য শুধু কথা বলা বা দ্বিমত পোষণের অধিকারে নয়, নিজেদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে সবার জন্য রাষ্ট্র প্রদত্ত সহায়তার সাংবিধানিক নিশ্চয়তা। সোভিয়েত ইউনিয়ন কিছুটা হলেও সবার জন্য সেই নিরাপত্তা দিতে পেরেছিল আর পশ্চিমা বিশ্ব বিভিন্ন অজুহাতে সেই ব্যবস্থা ধ্বংস করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তাই আমেরিকান ড্রিম আমার অনেকটা স্বর্গের লোভ দেখানো মনে হয়। এটা সত্য কারও কারও স্বপ্ন সত্যিই বাস্তবায়িত হয় কিন্তু অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে সেটা অধরাই থেকে যায়। 

আমাদের অনেকেই তাদের সোভিয়েত জীবনকে স্বর্গের সাথে তুলনা করে। এটা করে সে দেশে বিভিন্ন জিনিসের অভাব সত্যেও। কেন? মনে হয় সেখানে পুরোপুরি না হলেও কথিত স্বর্গের মত মানুষে মানুষে বাহ্যিক সাম্য ছিল। আবার সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেকেই সেই ব্যবস্থায় সুখী ছিল না। 
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস 
ওপারেতে যত সুখ আমার বিশ্বাস 
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি থেকেই এটা ঘটে। আর এটাই প্রমাণ করে সমস্যা মানুষের নিজের মধ্যে। ভেতরে পরিবর্তন না আনতে পারতে বাইরের কোন ইজমই কোন স্থায়ী সমাধান দিতে পারবে না। 

দুবনা, ২৩ এপ্রিল ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা