যুদ্ধ ও শান্তি

ইউক্রেন সৈন্যরা রুশ সৈন্যদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। অনেকেই হাসপাতালে। জানি না পশ্চিমা বিশ্ব এ নিয়ে কোন কথা বলবে কি না। কী এখানে, কী দেশে - অনেকের মনেই প্রশ্ন কেন রুশরা কিয়েভ বা লভভ আক্রমণ করে না। বিশেষ করে ওরা যখন জাপারঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আক্রমণ করছে, কাখভ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র আক্রমণ করছে যা জাপারঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রভাব ফেলতে পারে। আক্রমণ করছে কুরস্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আসলে এরা যুদ্ধ করছে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে যাদের মধ্যে মানবতা বলে কিছু নেই। জীবন, বিশেষ করে রুশদের জীবন তাদের কাছে মূল্যহীন। কিন্তু রুশরা তো শুধু ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ করছে না, যুদ্ধ করছে গোটা বিশ্বের সাথে। কিভাবে? পশ্চিমা বিশ্ব, মানে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড তো আছেই। এছাড়া পশ্চিমা বিশ্ব ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে অন্যান্য দেশগুলোকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাড় করাতে। পারছে না। আর তাই ইউক্রেন চাইছে যেকোন ভাবেই হোক এদের প্রভোক করতে যেন এরা কিয়েভ বা অন্যান্য শহরে যাকে বলে কার্পেট বোম্বিং শুরু করে। তাহলেই আমেরিকা অন্যান্য দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেতে। ফলে এদের সব দিক দেখেই মানে মান আর কূল সব রেখেই সামনে এগুতে হচ্ছে। এতে করে যুদ্ধ হয়তো দীর্ঘস্থায়ী হবে কিন্তু লোকক্ষয় হবে কম। কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ক্রমাগত যে অমানবিক রূপ ধারণ করবে সেটা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই আসল কথা। আমাদের সব দেশেও এভাবেই ছোট ছোট ঘৃণা দিয়ে শুরু হয়েছিল মূলত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আজ ঘৃণাই কিন্তু জাতীয় চরিত্রে পরিণত হচ্ছে। পাকিস্তানে এটা খুবই প্রকট। ভারত ও বাংলাদেশও এ পথেই হাঁটছে। ইউরোপ আর আমেরিকা যে একদিন সে পথে যাবে না তাই বা কে বলতে পারে। বর্ণবাদ এসব দেশে এখনও যথেষ্ট পরিমানেই বিদ্যমান। তাছাড়া ঘৃণা করতে করতে মানুষ একসময় তার মানবিক গুনাবলী হারিয়ে ফেলে। ইহুদীদের প্রতি ঘৃণা থেকেই শুরু হয়েছিল হিটলারের উত্থান। রুশদের প্রতি ঘৃণা থেকে নতুন কোন হিটলার যে জন্ম নেবে না সেটা কে বলবে। ইউরোপ আমেরিকার নেতাদের কথায় যত না ইউক্রেনের মানুষের প্রতি ভালোবাসা তার চেয়ে বেশি রুশদের প্রতি ঘৃণা। আর ঘৃণা যখন রাষ্ট্রের আদর্শ হয়, চালিকা শক্তি হয় আজ হোক কাল হোক সে রাষ্ট্র ব্যর্থ হতে বাধ্য। আজ ইউরোপ আমেরিকায় আমরা সেটাই দেখছি। নিজ নিজ দেশের জনগণের মঙ্গলের কথা তারা ভুলে গেছে। কোন আদর্শ যখন শুধু আদর্শের খাতিরে হয়, তার জনসম্পৃক্ততা না থাকে সেটা কাগজে কলমে যত ভালোই হোক মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। প্রতিদিন একটু একটু করে আমরা সে পথেই হাঁটছি। আর প্রোপ্যাগান্ডায় অন্ধবিশ্বাসী মানুষ নিজেদের ক্রুশ কাঁধে করে ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছে গলগফের বধ্যভূমির দিকে।

দুবনা, ২১ আগস্ট ২০২২


Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা