রাজনৈতিক ভ্যাকসিন

ইউরোপের শিল্প বিপ্লব সাফল্য পেয়েছিল এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার কাঁচা মাল আর সস্তা শ্রমের কাঁধে ভর করে আর তাদের আধুনিক সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছিল অনেকাংশে এই সাফল্যের উপর ভিত্তি করেই। আবার এই ইউরোপেই জন্ম নিয়েছিল ফ্যাসিবাদ, নাৎসিবাদ, আধুনিক দাসপ্রথা ইত্যাদি। একই সাথে মার্ক্সবাদ থেকে শুরু করে অনেক প্রগতিশীল মতবাদের জন্মস্থানও এই ইউরোপ। যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস খেয়াল করি তাহলে দেখব ইউরোপীয় সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ফ্রান্স বলতে গেলে প্রায় বিনাযুদ্ধে হিটলারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। শুধু ফ্রান্স কেন ইউরোপের সমস্ত দেশই হিটলারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বিনা যুদ্ধেই। বিভিন্ন দেশে যেটুকু প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল সেটা হয়েছিল মূলত কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে। ফ্রান্সের জেনারেল দ্য গল যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সেখানেও জাতিগত ভাবে যারা ফ্রেঞ্চ তারা খুব একটা সাড়া দেয় নি। সেদিক থেকে বলা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের জনগণের এক বিরাট অংশ এবং পুঁজিপতিরা কোন না কোন ভাবে ফ্যাসিবাদের সমর্থক ছিল। শুধু ইউরোপ কেন আমেরিকার অনেক শিল্পপতি হিটলারকে সাহায্য করেছে। সত্যি বলতে আমেরিকাও জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন দু পক্ষকেই অস্ত্র সরবরাহ করেছে নিজে যুদ্ধে নামার আগ পর্যন্ত।


সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কমিউনিস্ট আন্দোলন সারা বিশ্বেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সারা বিশ্বেই এই আন্দোলন দুর্বল হয়েছে। আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের শক্তিশালী করেছে মৌলবাদী আর ফ্যাসিবাদী শক্তি। আজ উপমহাদেশে মৌলবাদী শক্তির উত্থানে যেমন কমিউনিস্ট তথা বাম আন্দোলনের দুর্বলতা কাজ করেছে, একই ভাবে এদের দুর্বলতা ইউরোপে ফ্যাসিবাদি গোষ্ঠীগুলোকে শক্তিশালী করেছে। আজ ইউরোপ জুড়ে যে রুশ বিরোধী জোয়ার, দেশে দেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী সেনাদের মেমোরিয়াল ভাঙার যে উৎসব সেটাও এই কমিউনিস্ট ও বাম আন্দোলনের দুর্বলতার ফল। রাজনৈতিক ক্যানভাস থেকে তারা উধাও হবার সাথে সাথে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে সেই শক্তি যারা হিটলারের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছিল।

কমিউনিস্ট আন্দোলন প্রায় বিলুপ্ত হবার কারণে রাজনৈতিক মঞ্চে যে সব দল আছে তারা একে অন্যের বিকল্প নয়, রঙ বেরঙের বোতলে একই মদ মাত্র। এই রাজনৈতিক স্থবিরতা থেকে মুক্তি পেতে হলেও বাম আন্দোলন জোরদার করার কোন বিকল্প নেই। এটা অনেকটা ভ্যাকসিনের মত। সামাজিক সুস্থতা ও ভারসাম্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য।

দুবনা, ২৮ আগস্ট ২০২২ 




Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা