ভাঙাগড়া

ছোটবেলা থেকেই মিশর যাবার ইচ্ছা ছিল। কেন? পিরামিড দেখতে, স্ফিংস দেখতে। এটা মনে হয় আমার একার নয়, সবারই। এখনও মানুষ যখন গ্রীস বা ইটালি যায়, তারা প্রথমেই ভাবে গ্রীক ও রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শনের কথা। কেন? কারণ ইতিহাস মানুষকে ডাকে। মানুষ শুধু ভবিষ্যৎ নয় অতীতও জানতে চায়। অতীতকে জেনেই সে ভবিষ্যতের পথে হাঁটে। সে শুধু তার নিজের সভ্যতার ইতিহাসই জানতে চায় না, জানতে চায় মহাবিশ্বের ইতিহাস। তাইতো সে ভয়েজার, চন্দ্র, প্ল্যাঙ্ক, জেমস ওয়েব - এসব পাঠায় মহাকাশে। এই পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু আমরা শুধু তাদের সম্পর্কেই জানি যাদের কোন লিপি বা স্থাপত্য এখনও রয়ে গেছে। সেটা মায়া বা ইনকা সভ্যতাই হোক, সিন্ধু সভ্যতা বা অন্য কিছুই হোক। তাই কোন কারণে কেউ সেই প্রাচীন নিদর্শন ভেঙ্গে ফেললে আমরা তার নিন্দা করি। একারণেই তালেবানরা যখন বামিয়ানে বুদ্ধের মূর্তি ভাঙ্গে বা ইসলামিক স্টেট আলেপ্পায় আসিরীয় সভ্যতার নিদর্শন ধ্বংস করে আমরা প্রতিবাদী হই, ক্ষুব্ধ হই। আজ যে স্ট্যাচু আমাদের কাছে সেদিনের মনে হচ্ছে পাঁচ শ বছর পরে সে সবই অতীত হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বয়ে নিয়ে যাবে আমাদের বাণী। ইতিহাস কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভাল লাগুক আর নাই লাগুক প্রতিটি স্তরই আমাদের সাহায্য করেছে বর্তমানে আসতে। এখানে সিরাজ, মীর জাফর সবার অবদান আছে - তা সে যে ধরনেরই হোক। ইউরোপের দেশে দেশে সোভিয়েত সেনাদের স্ট্যাচু এটা শুধু সেনাদের গৌরব গাঁথা নয়, ইউরোপের মানুষের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস। আজ যখন বিভিন্ন অজুহাতে সেসব মেমরিয়াল ভাঙ্গা হয়, এতে সবচেয়ে বেশি আঘাত হানা হয় জাতির ইতিহাসের উপর। আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলেও ইতিহাস শিক্ষা দিতে জানে, সে বার বার শিক্ষা দেয়। এখানেও ব্যতিক্রম হবে না। শুধু মূল্য দিতে হবে সুদে আসলে।


দুবনা, ২৬ আগস্ট ২০২২


 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা