নাগর

আমার স্বল্পায়ুর দেশীয় জীবনে বাংলাদেশে তিন তিনটে দলের শাসনে বাস করার সুযোগ পেয়েছি। পাকিস্তান আমলে সামরিক শাসন ছিল। বাংলাদেশ আমলেও তাই, তবে এর মধ্যেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর জাতীয় পার্টির পরশ কিছুটা হলেও পেয়েছি। তবে কথাটা অন্য জায়গায়। প্রায় প্রতিটি সরকার বদলের সময় কিছু লোককে দেখেছি দল বদল করতে। তখন এদের দলছুট, বিশ্বাসঘাতক এসব বলে মনে হত। এখন মনে হয় না। এখন বুঝি এরা আসলে দল বদলায় না, বিভিন্ন দল বিভিন্ন সময়ে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়ে বিদায় নেয় আর এসব লোক তাদের আদর্শে অটল থেকে সব সময়ই সরকারি দলে থেকে যায়। এটা কি বাংলাদেশের ইউনিক বৈশিষ্ট্য নাকি বিশ্ব রাজনীতিতে এটা ডাল ভাত ঠিক জানি না। যাহোক, বাংলাদেশের মানুষের এই ধারা অনেকেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বজায় রাখে। এদের অনেককেই দেখি যখন যে দেশে থাকে তখন অন্ধভাবে সেই দেশের ন্যারেশনকে বিশ্বাস করে। বিশ্বাস করে বললে ভুল হবে, এরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কোন কিছুতেই বিশ্বাস করে না। তবে চার্চিলের সাথে গলা মিলিয়ে এরা বলে, আমার কোন আদর্শ নেই আছে স্বার্থ (ব্রিটেনের কোন বন্ধু নেই আছে জাতীয় স্বার্থ)। আসলে এদের চরিত্রই এমন - নিজের স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বাসা বাঁধে বা বলা চলে কোকিলের মত কাকের বাসায় ডিম পাড়ে, যতদিন দরকার সেখানে থাকে, সেই ব্যবস্থার গুনগানে মুখে ফেনা তুলে, আর যখনই কাজ শেষ অন্য কোথাও চলে যায় নতুন নাগরীর খোঁজে। আসলে এরা সরকারি দলের মানুষও নয়, এরা ভ্রাম্যমান প্রেমিক। যতদিন সম্পর্ক আছে প্রেমিকার মত সুন্দরী, বিনয়ী, সর্ব বিদ্যায় পারদর্শী আর কেউ নেই এই পৃথিবীতে, কিন্তু যেই কাজ শেষ, তখন এর মত দজ্জাল আর কেউ হয় না তাই সে নতুন প্রেমিকার (প্রেম নয় - এরা ভালবাসতে জানে না, জানে চিট করতে) খোঁজে পথে নামে।


দুবনা, ১৭ অক্টোবর ২০২২




Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি