রাজনীতি


লিজা চলে গেলেন। না না, ভয় পাবার কারণ নেই, তিনি পৃথিবী থেকে চলে যাননি, চলে গেলেন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রীট থেকে - ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদকে নিকুচি করে। সে জন্য গাট দরকার। উনি প্রমাণ করলেন যে উনি সত্যিকার অর্থেই ঝাঁঝালো মহিলা। এমনি এমনি তো ট্যাঙ্কে চড়ে রাশিয়াকে ভয় দেখাননি!

তবে দুষ্ট লোকেরা বিভিন্ন কথা বলে। তাই এই লেখার অবতারণা।

অনেক দিন আগের কথা। খুব সম্ভব ১৯৯৬ সাল। বিশ্ব হেভি ওয়েট বক্সিং চ্যালেঞ্জ ম্যাচ। জানেন তো এসব খেলা মানে টাকার ছড়াছড়ি। জিতলেও লাখ টাকা, হারলেও লাখ। কথায় বলে হাতি মরলেও লাখ টাকা, বাঁচলেও লাখ টাকা। অনেকটা হাতির মত। তাছাড়া হেভি ওয়েট বক্সাররা হাতির চেয়ে কম কিসে? যাহোক, সেবার প্রাইজ মানি ছিল বেশ বড় - জিতলে ৪ মিলিয়ন ডলার, হারলে ৩, এরকম কিছু একটা। যে চ্যালেঞ্জ করেছে সে অবশ্য মোহাম্মদ আলী, ফোরম্যান, টাইসন এদের মত জনপ্রিয় ছিল না, তবে ভালো বক্সার ছিল। তাই খেলা যে জমবে এটা সবাই ধরেই নিয়েছিল। কিন্তু যখন প্রথম রাউন্ডের কয়েক সেকেন্ডের মাথায় সে নক আউট হল, দুর্জনেরা বলতে শুরু করল যে সে খেলতে নামেনি, শুধু টাকার জন্য লড়াইয়ের ভান করেছে। হতে পারে। মারামারি না করেই যদি ৩ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যায় - সমস্যা কি?

লিজ ট্রাস যখন ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি সমস্যার সমাধান করতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে যত না কথা হয়েছে তার চেয়ে বেশি কথা হয়েছে তিনি কতদিন টিকে থাকবেন এ নিয়ে। অনেকটা ক্রিকেটে নাইট ওয়াচ ব্যাটসম্যানের মত। কেউ তার কাছ থেকে রান আশা করে না, চায় কোন রকমে দিনের শেষ পর্যন্ত সে ব্যাট করুক। বিপদ কাটুক। পরের সকালে নতুন ব্যাটসম্যান এসে ড্যামেজ রিপেয়ার করবে। যদিও আমাদের লিজা ৪৪ ওভার ব্যাট করেছেন তবে না করেছেন রান, না করেছেন ড্যামেজ রিপেয়ার করার জন্য ভাল কিছু। এটা অনেকটা নাইট ওয়াচ ম্যানের ভাল ব্যাটসম্যানদের রান আউট করে দেবার মত। তাহলে লিজা কেন এই দায়িত্ব নিলেন? শুনলাম এর ফলে তার বাৎসরিক পেনশন বেড়ে হয়েছে এক লাখ পাউন্ডেরও বেশি। তিনি হয়তো সেই বক্সারের মত আগে থেকেই জানতেন - জিতব না জানি, অন্তত টাকাটা তো পকেটে আসুক। হায়রে রাজনীতি! তুমিও আজ টাকার হিসাব নিকাশ।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সবাই এটাকে গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য বলে ওয়াজ করবে। অযোগ্য - তাই গনতন্ত্রই তাকে সরিয়ে দিল। কিন্তু এর ফলে যে হাজার হাজার মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হল তার জবাব কি কেউ দেবে? এই যে তিনি দেশের মানুষের সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য এত সব করলেন, যার ফলে আরও অনেক অনেক মানুষ সর্বস্ব হারাল তার জবাব কি তিনি দেবেন? তার কাছে কি আপনাদের মত গণতন্ত্রের পুজারিরা জবাবদিহিতা চাইবেন? না, কারণ এর উত্তর আপনাদের আছে। যত দোষ - পুতিন ঘোষ!
যাক, এখন শরৎ কাল। পাতা ঝরার এটাই সময়!

দুবনা, ২১ অক্টোবর ২০২২  

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি