একচোখা

 


সেদিন একজনের সাথে কথা হচ্ছিল ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। অনেকের মত সেও খুব চিন্তিত। আর সবচেয়ে বড় কথা রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই যুদ্ধ কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে সে সন্দিহান। ইউক্রেনে যে ফ্যাসিবাদ আছে সেটাও তার মনে হয় না। বলল

কই অন্তত একটা ফ্যাসিস্ট দেখাক।

আসলে এসবই মানুষের মাথায়। আর মাথায় একবার কোন ভূত ঢুকে গেলে কার সাধ্য সেই ভূত ছাড়ায়? তাই আমি নিজের থেকে কিছু বলিনি, এখনও বলব না। শুধু সে যে কথাগুলো বলে গেল সেটাই জানাচ্ছি।

অনেক দিন মস্কোয় বসবাস করলেও বিভিন্ন কাজকর্মে সে নিয়মিত বাইরে যায়। কাজের ক্ষেত্রেই অনেক মানুষের সাথে মেলামেশা করে। সারা ইউক্রেন ঘুরে বেড়িয়েছে। সবাই শুধু রুশ ভাষাতেই কথা বলে।

তাহলে রুশ ভাষার অবহেলা কোথায় হল? এসব বাজে কথা।

আমি ছোট্ট করে বললাম, আমাদের ভোটেই পাকিস্তান হয়েছিল আর ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করতে চেয়েছিল। আমাদের বাংলায় কথা বলতে দেবে না তা কিন্তু কেউ বলেনি। তার পরেও আমরা বিদ্রোহ করেছি। কেন? কারণ ভাষা একটা মৌলিক ব্যাপার। ভাষাই গড়ে তোলে মানুষ কিভাবে চিন্তা ভাবনার পটভূমি। কেমন হবে তার জীবন দর্শন, কেমন হবে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাই ভাষার উপর হস্তক্ষেপ মানুষ সহজে মানতে পারে না।

সে একসময় ইউরোপের একটি দেশে পড়াশোনার জন্য বছর দুয়েক ছিল। ওখানকার ঘটনা বলল। তখন সেখানে পোল্যান্ডের এক মেয়ে আসে পড়তে। ছেলেটি রাশিয়া থেকে এসেছে শুনে মেয়েটি যার পর নেই অবাক হয়েছিল, দুঃখ পেয়েছিল। ওর ভাষায় মেয়েটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিল রুশদের প্রতি বিদ্বেষ। কিছু দিন পরে ছেলেটি তার বৌকে নিয়ে একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। আবার দেখা হল সেই মেয়েটির সাথে। মেয়েটির সাথে বৌকে পরিচয় করিয়ে দিল। ওরা হ্যান্ড শেক করল। এরপর মেয়েটি নাকি অনেকক্ষণ ধরে ওর বউকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাত মুছেছিল। প্রকাশ পাচ্ছিল কতটা ঘৃণা করে রুশদের। গল্পের শেষে বলল

এখন ইউক্রেনের লোকজন রুশদের প্রতি এমনটাই আচরণ করে।

আমি অবাক হয়ে ভাবলাম পোল্যান্ডের মেয়েটি শুধু রুশোফোব নয়, রীতিমত ফ্যাসিস্ট বর্ণবাদী। আর এটা গতকাল থেকে নয়, অনেক দিন থেকেই। আর রুশদের কনসার্ণের একটা কারণ ইউরোপের, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশে দেশে এই রুশ বিদ্বেষ। ইউক্রেনের যেসব লোকজন রুশদের প্রতি এমন আচরণ করে তারা কি ফ্যাসিস্ট নয়? ওর ধারণা নয়। ব্রাহ্মনের গায়ে যখন শুদ্রের ছায়া পড়ে সে জন্য সূর্য দায়ী হয় না, বেচারা শুদ্রকেই সেই হিসাব নিকাশ কড়ায় গণ্ডায় মেটাতে হয়।

কাকতালীয় ভাবে ছেলেটি ব্রাহ্মণ। বেচারা!

দুবনা, ০৪ অক্টোবর ২০২২



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা